বিশেষ প্রতিবেদক:
টেলিভিশনের আগে বাংলাদেশে রেডিওর আবির্ভাব ঘটলেও এটা অনেক দেরিতে প্রসার লাভ করেছে। বেসরকারিভাবে রেডিও সম্প্রসারণ দেরিতে হওয়াই এর প্রধান কারণ। বর্তমানে রেডিওতে নানা ধরনের কাজ করে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রথম বেসরকারি এফএম ‘রেডিও টুডে’র প্রধান বার্তা সম্পাদক সেলিম বাসার বলেন, ‘যারা ক্যারিয়ার হিসেবে সাংবাদিকতা নিতে চায়, প্রোগ্রামে কাজ করতে চায় এবং উপস্থাপনার প্রতি আগ্রহী, তাদের জন্য রেডিওতে অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। যেখানে তারা নিজেদের স্বপ্নের ক্যারিয়ার গড়তে পারবে।’
রেডিও জকি (আরজে)
একজন আরজে শ্রোতার সামনে তার রেডিও স্টেশনের প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। তাই আরজের দায়িত্ব অনেক। আরজে নিয়োগ দেয়া সময় বেশ কিছু বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়। এগুলো হলো- শুদ্ধ ও আকর্ষণীয়ভাবে বাংলা বলা, আইকিউ, গান ও চলচ্চিত্র সম্পর্কে ভালো জ্ঞান, শ্রোতাদের প্রভাবিত করার ক্ষমতা এবং সাম্প্রতিক নানা বিষয়ে ভালো জ্ঞান। আরজে হওয়ার জন্য স্নাতক পাশ যে কেউ আবেদন করতে পারেন। তবে কিছু কিছু রেডিও প্রয়োজনীয় যোগ্যতা সম্পন্ন এইএসসি পাশ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরতদের সুযোগ দিয়ে থাকে।
প্রডিউসার
রেডিওতে প্রডিউসার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। এখানে দুই ধরনের প্রডিউসার কাজ করেন; প্রোগ্রাম প্রডিউসার ও নিউজ প্রডিউসার। প্রোগ্রাম প্রডিউসারদের মধ্যে আছে শিফট প্রডিউসার, অ্যাসোসিয়েট প্রডিউসার, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রডিউসার, স্টেশন প্রডিউসার এবং আউটডোর ব্রডকাস্টিং প্রডিউসার। অভিজ্ঞদের হেড অব প্রোগ্রাম হিসেবে কাজ করার সুযোগ থাকে। তবে শুরুতে সবাইকেই সাধারণত অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রডিউসার হিসেবে কাজ করতে হয়। রেডিওতে প্রডিউসার হিসেবে যোগ দিতে চাইলে সংশ্লিষ্ট জ্ঞানসহ অন্তত স্নাতক পাস হতে হবে। এছাড়া সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল সম্পর্কে ভালো জ্ঞান এবং ব্যবস্থাপনায় দক্ষ হতে হবে।
আউটডোর ব্রডকাস্টার (ওবি)
আউটডোর ব্রডকাস্টার (ওবি) হিসেবে কাজ করতে চাইলে চ্যালেঞ্জ নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। কারণ ওবিদের প্রধান দায়িত্ব বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্পর্কে সরাসরি তথ্য দেয়া বা তাৎক্ষণিক সাক্ষাৎকার নেয়া। এজন্য অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য নেয়া, সাক্ষাৎকার নেয়ার দরকার হলে তাৎক্ষণিক গুছিয়ে প্রশ্ন করার দক্ষতা থাকা দরকার। ওবিদের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক থাকা আবশ্যক। এছাড়া নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা, গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ও ব্যক্তি সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে। আর উচ্চারণে তো ভালো থাকতেই হবে।
মিউজিক শিডিউলার
মিউজিক শিডিউলারের প্রধান কাজ রেডিওর কোন গানের পর কোন গান বাজবে তা ঠিক করা। এ ক্ষেত্রে গান বাছাইয়ের জন্য দিনের কোন সময়ে কোন গান শ্রোতারা পছন্দ করে, সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। তাই গান সম্পর্কে থাকতে হবে অগাধ জ্ঞান। এই পদে কাজ করার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা নূন্যতম স্নাতক ডিগ্রি।
রিপোর্টার
রেডিওতে রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে সাংবাদিকতা জানার পাশাপাশি অডিও এডিটিংসহ আরো কিছু বিষয় সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে। সেই সব জ্ঞান সম্পন্ন স্নাতকধারীদেরকে এই পোস্টের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান সাংবাদিকতা জানে এমন স্নাতকধারীদেরকে ওই বিষয়গুলো প্রশিক্ষণ দিয়ে শিখিয়ে নেয়।
সংবাদ পাঠক
শুদ্ধ ও আকর্ষণীয় উচ্চারণের অধিকারী স্নাতকধারীদেরকে এই পদের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। প্রোগ্রাম ও গান ভিত্তিক এফএম রেডিওগুলোতে এই পদের জন্য খুব বেশি একটা লোক নেয়া হয় না। এখানে আরজে এবং শুদ্ধ ও আকর্ষণীয় উচ্চারণের অধিকারী রিপোর্টারদেরকে দিয়ে সংবাদ পাঠের কাজটা চালিয়ে নেয়া। কারণ তাদের সংবাদের অংশ খুবই কম থাকে। তবে সংবাদ ভিত্তিক বা সংবাদকে প্রধান্য দেয়া রেডিওগুলোতে এর চাহিদা ব্যাপক।
সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার
যেহেতু রেডিও অডিওভিত্তিক মিডিয়া, তাই সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের উপর তাদের সব কিছু নির্ভর করে। আরজের উপস্থাপনা, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, প্রতিষ্ঠানের ওয়েলকাম টিউন, গান, বিজ্ঞাপণ কখন কতটুকু প্রচার হবে- সবটাই নির্ধারণ করেন সাউণ্ড ইঞ্জিনিয়ার। রেডিও স্টেশনে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারকে দক্ষতার প্রমাণ দিতে হয় প্রতি পদে পদে। অন্যান্য পদের মত এখানেও শিক্ষানবিস হিসেবে নতুনদের জায়গা দেয়া হয়। এক্ষেত্রে এই বিষয়ে পড়াশুনা করা বা প্রশিক্ষণ নেয়াদেরকে প্রাধান্য দেয়া হয়।
অ্যাড শিডিউলার
রেডিওর আয়ের বড় একটি উৎস হচ্ছে বিজ্ঞাপণ। তাই এই পদের জন্য তারা সব সময়ই দক্ষ লোক খোঁজে। অ্যাড শিডিউলারদের প্রধান কাজ হলো- বিজ্ঞাপণের হিসেব রাখা এবং কোন সময়ে কোন বিজ্ঞাপণ যাবে তা ঠিক করা। অ্যাড শিডিউলারদের সাধারণত স্নাতক ডিগ্রিসহ ইউনমিডিয়া, অডিওভল্টের মত প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।
মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস্
মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস্ বিভাগ রেডিও স্টেশনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কর্পোরেট এবং মিডিয়া হাউস থেকে এরা বিজ্ঞাপণ সংগ্রহ করে। প্রতিষ্ঠানের পরিচিত বা জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিও তাদের কাজ। এখানে লোকবল নিয়েগের ক্ষেত্রে বাণিজ্য বিভাগের যেকোন বিষয়ে স্নাতকধারীদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। কারণ মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস্ বিভাগে কাজ করতে হলে ভালো বিপণন গুণ থাকা জরুরী।