নিজস্ব প্রতিবেদক:
জীবন থেকে নেয়া, সঙ্গম, বেহুলার মতো কালজয়ী চলচ্চিত্রের স্রষ্টা জহির রায়হান। ষাটের দশকে চলচ্চিত্রের সোনালী যুগের সোনা ফলিয়েছেন তিনি। তাঁর প্রতিবাদী ও অমর সৃষ্টি `স্টপ জেনোসাইড’ বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছিল যুদ্ধবিদ্ধস্ত একটি দেশের চাক্ষুষ চিত্র। তিনি একাধারে একজন সাংবাদিক, লেখক ও উপন্যাসিক। সব ছাপিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন চলচ্চিত্র যোদ্ধা। নির্মাণ করেছেন বিখ্যাত সব সিনেমা। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি বড় ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে মিরপুরে নিখোঁজ হন তিনি। তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে জানা যায় মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের হাতে মিরপুরে তিনি শহীদ হন।
তিনি ‘নিগার’ চলচ্চিত্র পুরস্কার, আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৪) এবং মরণোত্তর বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭১), একুশে পদক (১৯৭৭), স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯২) সহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
জহির রায়হান ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার অন্তর্গত মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬১ সালে সুমিতা দেবীকে এবং ১৯৬৬ সালে তিনি সুচন্দাকে বিয়ে করেন। দু’জনেই ছিলেন সে সময়কার বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী।
কখনো আসেনি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ১৯৬১ সালে তিনি রূপালী জগতের পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র সঙ্গম নির্মাণ করেন (উর্দু ভাষার ছবি) ১৯৬৪ সালে।
জহির রায়হান সম্পর্কিত আরও খবর
⇒ বিপ্লবী চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান
⇒ জহির রায়হানের অন্তর্ধান দিবস
পরের বছর তার প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র বাহানা মুক্তি পায়। জহির রায়হান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং ২১শে ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। ভাষা আন্দোলন তাঁর ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল, যার ছাপ দেখতে পাওয়া যায় তার বিখ্যাত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেওয়া চলচ্চিত্রে। তিনি ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন।
কলকাতায় তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেওয়ার বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয়। এই প্রদর্শনীর সকল টাকা তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ব্যয় করেন। এ সময় সত্যজিত রায়, তপন সিনহা, মৃণাল সেন এবং ঋত্বিক ঘটকের মত বিখ্যাত নির্মাতারা তাঁর চলচ্চিত্র দেখে ব্যাপক প্রশংসা করেন।
কখনো আসেনি, সোনার কাজল, কাচের দেয়াল, বাহানা, বেহুলা, আনোয়ারা, দুই ভাই, কুচবরণ কন্যা, জুলেখা, সুয়োরাণী-দুয়োরাণী, সংসার, মনের মত বউ, শেষ পর্যন্ত, একুশে ফেব্রুয়ারী, জীবন থেকে নেয়া, স্টপ জেনোসাইডসহ বেশকিছু চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তিনি। এছাড়া তিনি হাজার বছর ধরে বিখ্যাত উপন্যাস রচনা করেন।