প্রতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় ‘বাংলা ইশারা ভাষা দিবস’। শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার তুলে ধরতেই এ দিবস। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল “ইশারা ভাষা উন্নয়নে, এগিয়ে যাব প্রতিজনে”। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়েছে।
এ উপলক্ষে সমাজসেবা অধিদফতর, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংগঠনের সমন্বয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়। সমাজসেবা অধিদফতর, সমাজসেবা ভবন, আগারগাঁও, ঢাকায় আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
সমাজসেবা অধিদফতর ‘বাংলা ইশারা ভাষা দিবস’ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীরা সমাজকল্যাণমন্ত্রীর কাছে একটি ইশারা ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার দাবি করেন। এ সময় মন্ত্রী তাদের দাবি মেনে নিয়ে স্বল্প সময়ে একটি ইশারা ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন।
বাংলাদেশে শ্রবণ প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩০ লক্ষ। শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী মানুষদের স্বতন্ত্র এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাংলা ইশারা ভাষা। প্রতিবন্ধিতার কারণে এই ভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষায় তাদের যোগাযোগের কোন সুযোগ নেই। এছাড়াও অটিস্টিক, নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকে ইশারা ব্যবহারের মাধ্যমে যোগাযোগে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের অধিকার সনদ অনুসমর্থন করে। এই সনদ ইশারা ভাষার স্বীকৃতি ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের জন্য শরিক রাষ্ট্রকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেছে। উন্নত দেশগুলোতে ইশারা ভাষাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত এবং বেশ কিছু দেশে দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা প্রদান করেছে। এই দেশগুলোতে ইশারা ভাষা আইন, ইন্সটিটিউট ও দোভাষী সনদ প্রাপ্তিসহ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ রয়েছে। ভারত সরকার ২০১১ সালে ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ভারতীয় ইশারা ভাষা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
২০০৯ সালে একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘বাংলা ইশারা ভাষা এদেশের অন্যতম ভাষা’ ঘোষণা করেন। তিনি শ্রবণ প্রতিবন্ধী জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করতে বিটিভিসহ সকল টেলিভিশন চ্যানেলের প্রধান সংবাদে ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ইশারা ভাষা উপস্থাপনের নির্দেশ প্রদান করেন। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং দেশ টিভিতে বাংলা ইশারা ভাষায় সংবাদ উপস্থাপিত হচ্ছে। ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় নেতৃত্বে এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ০৭ ফেব্রুয়ারিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলা ইশারা ভাষা দিবস হিসাবে নির্ধারণ করা হয়।