বিশেষ প্রতিবেদক:
বর্তমান সময়ের এক সম্ভাবনাময় অভিনেত্রী চমক তারা। চলচ্চিত্র, টেলিভিশন ও মঞ্চ নাটকে কাজ করে চলেছেন সমান তালে। চলচ্চিত্রে পা রেখেছেন নায়িকা হিসেবে, তবে বেশ কিছু আইটেম গানও করছেন তিনি। কালচারাল ইয়ার্ডের সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে অভিনয় জীবনের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন এই অভিনেত্রী।
কালচারাল ইয়ার্ড: কেমন আছেন?
চমক তারা: ভালো আছি।
কালচারাল ইয়ার্ড: আপনার শুরুটা তো মঞ্চ দিয়ে। সেই গল্পটা বলুন।
চমক তারা: শুরুটা হয় ২০০৯ সালে ঢাকা ড্রামা নাট্যদলে যোগদানের মাধ্যমে। ২০১০ সালে দল পরির্বতন করে চলে আসি পদাতিক নাট্য সংসদে। এখনও যুক্ত ওই দলটির সাথেই কাজ করছি। ইতোমধ্যেই অভিনয় করেছি রক্ত চোষা, জনমাংক এবং কাল রাত্রি নাটকে।
কালচারাল ইয়ার্ড: টেলিভিশনে কবে কাজ শুরু করেন ?
চমক তারা: যখন শুরুর দিকে নাট্যদলে কাজ করতাম তখন টেলিভিশন বা চলচ্চিত্রে আসার পরিকল্পনা ছিলো না। হঠাৎ করেই ২০১১ সালে আখতারুজ্জামান তুহিন পরিচালিত আরটিভির ধারাবাহিক নাটক ‘মহল্লার ভাই’ দিয়ে টিভি নাটকে কাজ করা শুরু করি। এরপর টিভি নাটকেও নিয়মিত হই। আমার অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে কায়সার আহমেদের ‘অহংকার’ ও ‘রঙ্গিলা’, ইদ্রিস হায়দারের ‘স্বপ্নের রংধনু’, এস এম হোসেন বাবলার ‘গুল বাহাদুর লজ’, মুজিবুর রহমান দিলুর ‘অর্জন একাত্তুর’, নোমান হাসান খানের নাটক ‘গেদু কঞ্জুস’, সর্দার রোকনের ‘বধু বরণ’, এস এম দুলালের ‘নয় ছয় আনলিমিটেড’ অন্যতম। এখন বৈশাখী টিভিতে প্রচারিত সাজ্জাদ হোসেন দোদুলের ধারাবাহিক ‘ছায়া বিবি’, আরটিভিতে প্রচারিত এফ জামানের ‘তাপসের নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র’সহ বেশ কয়েকটি নাটকে কাজ করছি।
কালচারাল ইয়ার্ড: চলচ্চিত্রে শুরুটা কবে থেকে?
চমক তারা: মাসুদ আজাদের ‘বস্তির সম্রাট’ চলচ্চিত্রে প্রথম চুক্তিবদ্ধ হলেও ২০১৫ সালে আমার অভিনীত প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র হচ্ছে এ আর মুকুল নেত্রবাদী পরিচালিত ছবি ‘মা বাবা সন্তান’। এরপর রকিবুল আলম রকিবের ‘মাস্তান ও পুলিশ’ মুক্তি পায়। ‘বস্তির সম্রাট’সহ এখন মুক্তির অপেক্ষায় আছে এম আর খান মুকুলের ‘প্রিয়ার জন্য মরতে পারি’, আলী আজাদের ‘দেশ আমার’, তারেক মাহমুদের চলচ্চিত্র ‘চটপটি’। এছাড়া আর জে রানার ‘অজান্তে ভালোবাসা’, মনির হোসেন মিঠুর ‘ভালোবাসা ষোল আনা’, আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘চুরি চুরি মন চুরি’, আল হাজেমের ‘ভবঘুরে’, উত্তম আকাশের সদ্য সেন্সর পাওয়া ‘ধূসর কুয়াশা’সহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রের আইটেম গানেও কাজ করেছি।
কালচারাল ইয়ার্ড: মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র- কোনটায় কাজের অনুভুতি কেমন?
চমক তারা: আসলে তিনটায় তিন ধরনের অনুভুতি। মঞ্চে উঠার পরে পুরো অভিনয় শেষ করে ফিরতে হবে। আবার সামনেই দর্শক। খুব কাছ থেকে তাদের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। এটা এক রকম অনুভুতি। আবার টেলিভিশনে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হয় যে, মানুষের হাতে রিমোট আছে। তাদের প্রত্যাশিত অভিনয় না করতে পারলে, তারা একটা বাটন প্রেস করে চলে যাবে অন্য চ্যানেলে। আর চলচ্চিত্র, সেটা তো বড় পর্দা। ওখানে মানুষ সব কিছু নিঁখুদভাবে দেখতে পাচ্ছে। তারা টাকা দিয়ে টিকিট কেটে চলচ্চিত্র দেখতে যাচ্ছে। আবার প্রযোজন অনেক টাকা লগ্নি করছে। সব মিলিয়েই থাকে প্রচ- চাপ।
কালচারাল ইয়ার্ড: অভিনয়ের ক্ষেত্রে কী কোন পার্থক্য আছে?
চমক তারা: পার্থক্য ঠিক বলবো না, কারণ সব ক্ষেত্রেই আমাদেরকে নির্ধারিত চরিত্রটাকে অভিনয়ের মাধ্যমে চিত্রায়ণ করতে হয়। তবে মঞ্চে কোন রিটেকের সুযোগ নাই। পুরো স্টেজের ওই জায়গাটুকুর মধ্যে সব কিছু ফুটিয়ে তুলতে হবে। সেখানে কিছু সীমাবদ্ধ থাকে। আবার পরিচালকের কাট বলার সুযোগ না থাকায় অভিনয়ে স্বাধীনতাও থাকে। নির্ধারিত সময়ে চিত্রনাট্যানুযায়ী নিজেকে অভিনয়ের মাধ্যমে মেলে ধরার সুযোগ থাকে। থাকে ধারাবাহিকতা। আবার চলচ্চিত্র-নাটকের ক্ষেত্রে দৃশ্যানুযায়ী ক্যামেরার কথা মাথায় রেখে অভিনয়টা করতে হয়। এখানে অভিনয় করার সময় দর্শক সমানে থাকে না। সেটা একটা বাড়তি সুবিধা থাকে। কোনভাবে অভিনয়ে কমতি হলে আবার সেই দৃশ্যটা করার সুযোগ থাকে। পরবর্তী পোস্ট প্রোডাকশনের মাধ্যমে ডায়লগ, কালার, গঙ্গীত দিয়ে কাজটাকে আরও সুন্দর করাও সুযোগ আছে। আবার মঞ্চের দর্শক থাকে কম আর এটা একবারই প্রদর্শিত হয়। টেলিভিশন নাটক / চলচ্চিত্র যেহেতু রেকর্ডকৃত তাই এটা স্থায়ী হয়ে থাকে।
কালচারাল ইয়ার্ড: কোন সেক্টরে কাজ করে আপনি বেশি আনন্দ পান?
চমক তারা: কাজে যদি আনন্দ না পাওয়া যায়, তাহলে অভিনয়ের মত সৃজনশীল কাজ করা সম্ভব নয়। চলচ্চিত্র টেলিভিশন ও মঞ্চ- সব সেক্টরেই কাজ করে আনন্দ পাই। তবে আমি বেশি আনন্দ পাই মঞ্চে কাজ করে। কারণ মঞ্চ আমার কাছে অভিনয় শেখার সব চেয়ে বড় জায়গা। এটাকে আমি বিদ্যালয় মনে করি।
কালচারাল ইয়ার্ড: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
চমক তারা: আপনাকেও ধন্যবাদ।