বিশেষ প্রতিবেদক:
মানুষে মানুষে ভালোবাসা ও সহনশীলতার বাণী ছড়িয়ে দিতে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে আন্তর্জাতিক সুফি উৎসব। ভারত, ইরান ও তুরস্কের রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতিতে শুক্রবার তিনদিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আল্লামা রুমি ফাউন্ডেশন ও হাটখোলা ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এই উৎসবের আয়োজন করে।
শিল্পকলার বিভিন্ন মিলনাতয়নে চলছে সেমিনারসহ বিভিন্ন আয়োজন। এছাড়া বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নন্দন মঞ্চে আয়োজন করা হয়েছে সঙ্গীত পরিবেশনার। তিনদিনের এই আয়োজনে থাকছে ১১৯জন সুফি গানের শিল্পী এবং বিদেশি পাঁচটি ব্যান্ড গানের পরিবেশনা।
উৎসবে আগতরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি রক্ষা ও অশুভ শক্তি প্রতিহত করতে সুফিবাদের মর্মবাণী সবার কাছে পৌঁছানোর তাগিদ অনুভব করছে। সুফি উৎসবে একটা বোধের তৈরি হবে বলে আশাবাদী আগত অতিথিরা। তারা অংশ নিচ্ছেন আলোচনা, আড্ডা আর গানে। সকল ভেদাভেদ ভুলে মানুষের মধ্যে বোধের উন্মেষ ঘটাতে এই সুফি উৎসব কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন উৎসবে আগতরা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, সুফিবাদে মানবতাবাদী ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তার প্রকাশ ঘটে। ভারতীয় উপমহাদেশে সুফিবাদের প্রভাবে সব ধর্মের মানুষের পাশাপাশি নানান ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষ সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে বাস করে। তিনি বলেন, ইসলামের মর্মবাণীও শান্তির কথা বলে।আমি মুসলমানদের প্রভু আল্লাহ কোরআন শরীফের কোথাও এ কথা বলেননি। বলেছেন, আমি বিশ্ব মানবতার প্রভু, আমি বিশ্বাসীদের প্রভু।’
উৎসব আয়োজনে উপস্থিত হয়ে ইরানের রাষ্ট্রদূত আব্বাস ভায়েজি দেহনবি বলেন, ‘ধর্মীয় মর্মবাণীর চর্চা প্রত্যেক মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই বাণীর অপব্যাখ্যা যে কোন ধর্মের জন্যই ভয়ঙ্কর। তার ফলে সৃষ্টি হয় ইসলামিক স্টেটের মতো জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর। এর বিপরীতে সুফিবাদ শান্তির বারতা নিয়ে হাজির হয়।’
আল্লামা রুমি ফাউন্ডেশনের সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবদুল করিম বলেন, এ দেশের মানুষ বেশিরভাগ মুসলিম হলেও হাজার বছর ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে সব ধর্মের মানুষ এক সাথে মিলেমিশে থাকছে। তারা হিজাব পড়লেও ভোটের সময় দুইজন নারীকেই বেছে নেয়। উদার মুসলিম বাংলাদেশে যারা সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের চর্চা করে তাদের সংখ্যা নগণ্য এবং তারা সমাজ বিচ্ছিন্ন।’
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, সুফিবাদের সার কথা হল ভালোকে গ্রহণ করা ও মন্দকে পরিহার করা। লালন ফকিরের মতো সাধকরা সেই মর্মবাণীকে গানে গানে ছড়িয়ে দিয়েছেন মানুষের মাঝে।