নিজস্ব প্রতিবেদক :
‘ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল’ সম্মেলক গানের মাধ্যমে কণ্ঠশীলনের পঁয়ত্রিশে পদার্পণ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়েছে। কণ্ঠশীলনের নিয়মিত, অনিয়মিত সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা কণ্ঠশীলনের পঁয়ত্রিশ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানান। একসঙ্গে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। শিরিন ইসলামের উপস্থাপনায় কথা, আবৃত্তি ও গানে মূখর হয়ে ওঠে পুরো অনুষ্ঠান।
কণ্ঠশীলনের সাহিত্য সংস্কৃতিতে অবদান নিয়ে আলোচনা করেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আক্তারুজ্জামান, আবৃত্তি শিল্পী, লেখক খালেক মল্লিক, আবৃত্তি শিল্পী এস, এম, লুৎফুল কবির, আবৃত্তি ও অভিনয় শিল্পী আহসান দিপু প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, কণ্ঠশীলন শুধু শুদ্ধ উচ্চারণ ও আবৃত্তি শিক্ষার প্রশিক্ষণই দিচ্ছে তা নয়, মানুষের মানবিক গুণাবলীর বিকাশে অতুলনীয় ভূমিকা পালন করছে। বাঙালি সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে, ধর্মান্ধতার কুচক্রীকে প্রতিহত করার সাংস্কৃতিক আন্দোলনে প্রথম সারিতে রয়েছে কণ্ঠশীলন।
তানজিনা তমা ও নাদিমুল ইসলামের গানের পাশাপাশি আবৃত্তি করেন লিটন বারুরী, সালাম খোকন, অনন্যা গোস্বামী ও জেএম মারুফ সিদ্দিকী।
শিক্ষাগুরু ওয়াহিদুল হক ও বাক্শিল্পাচার্য নরেন বিশ্বাসের দীর্ঘসময় পথচলার সঙ্গী অধ্যক্ষ মীর বরকত, সভাপতি গোলাম সারোয়ার ও সহ-সভাপতি মোস্তফা কামাল কণ্ঠশীলন নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। ১৯৮৪ সালে কণ্ঠশীলন প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিয়মিত শুদ্ধ উচ্চারণ ও আবৃত্তি শিক্ষার আবর্তন পরিচালনা করে আসছে। ওয়াহিদুল হক, নরেন বিশ্বাসের স্বপ্ন ছিলো বাংলার মানুষ শুদ্ধ বা প্রমিত উচ্চারণে কথা বলবে। ওয়াহিদুল হক বলতেন, ‘কথা মানুষকে কাছে টানে, কথা মানুষকে দূরে ঠেলে দেয়। কথা মানুষকে বন্ধু করে, কথা মানুষকে শত্রু করে।’ তাই এক মানভাষায় কথা বলার আমাদের এই আন্দোলন চলতেই থাকবে। সবার সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যাবে কণ্ঠশীলন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
‘সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান, সঙ্কোটের কল্পনাতে হয়ো না ম্রিয়মান…’ সম্মেলক গানের পরে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।২রা বৈশাখ ১৪২৫, রবিবার সন্ধ্যা সাতটা। কণ্ঠশীলন কার্যালয়, ২২২ নিউ এলিফ্যান্ট রোডে সাহিত্যের বাচিক চর্চা ও প্রসার প্রতিষ্ঠান কণ্ঠশীলনের পঁয়ত্রিশে পদার্পণ উৎসবের আয়োজন করা হয়।
কণ্ঠশীলন এই যাত্রা আরম্ভ করেছে ১৩৯১ সালের ২ বৈশাখে (১৯৮৪ সালের ১৫ই এপ্রিল)। সুবাচন চর্চার নিয়মিত পাঠক্রমের মধ্য দিয়ে এ-পর্যন্ত প্রায় আট হাজার তরুণ-তরুণীকে কণ্ঠশীলন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাথমিক পাঠ দিয়েছে। অগ্রসর এবং গভীর আস্বাদের আগ্রহীরা প্রতিষ্ঠানে স্থায়ীভাবে যুক্ত হয়ে নিরন্তর অনুশীলনের ফল হিসেবে উপহার দিয়ে চলেছেন আবৃত্তি অনুষ্ঠান, শ্রুতিনাট্য ও মঞ্চ নাটক।
কণ্ঠশীলন কেবল কিছু মঞ্চ ও মাইক্রোফোন-সফল পারফর্মার-মাত্র গড়তে চায়নি। এখানে ভাষাকে ভালোবেসে যত মানুষ লগ্ন হয়েছে, একে অপরে ঘন হয়ে রয়েছে জীবন ও সমাজের ধারক বৃত্তিগুলিকে, তারা সর্বতোমুখী বিকাশের চর্চায় নিরত।