জাহিদ মজুমদার :
বাংলাদেশের প্রথম নারী সুপার হিরো সিনেমা বলা হচ্ছে ইফতেখার চৌধুরী পরিচালিত সিনেমা `বিজলী` কে। এই সিনেমাতে বিজলী নামের একটি নারী এমন এক পাওয়ার নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে যে শক্তিতে বদলে দেয়া যায় পৃথিবীকে। এই ছবিতে নারী বিজলী প্রধান। বিজলী বিদ্যুৎ পাওয়ার নিয়ে জন্ম নেয়। কিন্তু তার এই পাওয়ারের কারণে জন্ম থেকেই কিছু শত্রু তৈরি হয়ে যায়। ২০ বছর ধরে তার পালক বাবা তাঁকে সেই শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করতে পালিয়ে বেড়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কিন্তু যেখানেই যায় তার শক্তি ধরা পড়ে যায়।
বিজলী সিনেমার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভিএফএক্স আর সাউন্ড ইফেক্ট বিজলীকে দেবার চেষ্টা করে অন্যতম মাত্রা। এতে হলিউডের কিছু ভিএফএক্স ছবির ফিল দেয়ার চেষ্টা ছিলো। তবে সিনেমাটোগ্রাফির দুর্বলতা প্রবল ছিল। যার কারণে ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট তেমন প্রভাবিত করতে পারেনি দর্শক মন। সাউন্ড ভাল ছিলো। এর অতিরিক্ত গান বিরক্তির উদ্র্রেক করে। মূল ভাবকেই ম্লান করে দেয়। এতো গানের ব্যবহার না করে বিজলীর সুপার পাওয়ারকে নিয়েই সিনেমা হিট করা যেত। তবে বিজলীর সুপার পাওয়ারকে নিয়ে গল্পে তেমন কিছু দেখানো হয়নি।
সুপার পাওয়ারের কোনো স্বার্থক রুপ পায়নি। তার এই পাওয়ার আদৌ কি হতে পারে বা কি হবে এটি স্পষ্ট নয়। তবে পরিচালককে আরও কৌশলী আর মনোযোগী হওয়া উচিত ছিল। অন্ততঃপক্ষে ইফতেখার চৌধুরীর কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি আশা করছিলাম।
শুরুতে বিজলীর বাবা সাজ্জাদ চৌধুরী ও মায়ের রোড এক্সিডেন্টে মৃত্যু আর বিজলীর সুপার পাওয়ার নিয়ে পৃথিবীতে আসার গল্পটা দারুণ ছিলো। বিজলীর চাচা নাদিম চৌধুরীর ষড়যন্ত্রে বিজলীর বাবা-মায়ের মৃত্যু সাসপেন্স ধরে রাখার চেষ্টা ছিলো পুরো ছবিতে। এই সাসপেন্স ধরে রাখা সম্ভব ছিলো না বেশিক্ষণ। ডাক্তার ও বিজ্ঞানী জেরিন খানের বিজলীকে খুঁজে বেড়ানো ‘কৃষ’ ফিল দেয়। তবে ক্লাইমেক্স ধরে রাখতে পারেনি ছবিটি। আর শেষে আনিসুর রহমানের এন্ট্রি ভালো ছিলো।
তবে তাঁর পরিচয় সময় বলে দেবে এমন সংলাপ প্রয়োজন ছিলো না। আর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চাচার সঙ্গে মারামারিতে গিয়েই শেষ করে টু বি কন্টিনিউডে যাওয়ার দরকার ছিলো না। শেষটা আরও চমৎকার হতে পারতো। চিত্রনাট্যের সময় এটি সংশোধন করা প্রয়োজন ছিলো।
চিত্রনাট্য ভাল ছিলো, তবে সংলাপ অত্যন্ত দুর্বল। অনেকে বলছেন হলিউড, বলিউডের মতো আমাদের বাজেট নেই, তাই এমন ছবিই হবে। কিন্তু সংলাপ, অভিনয়, সম্পাদনা আর সিনেমাটোগ্রাফি কি ভালো করা যেতনা। সেগুলো একটু মনোযোগী হলেই সম্ভব হতো।
জাহিদ হাসানের কিছু সময় পর্দায় থাকা অভিনয় দুর্দান্ত। এক সময়ের প্রভাবশালী অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের অভিনয় হতাশ করেছে। স্বাধীন খসরু, শতাব্দী রায়, টাইগার রবি দুর্দান্ত ছিলো। দিলারা জামান তো বরাবরের মত ভাল ডেলিভারি দিয়েছে।
তবে ভারতীয় নায়ক রনবিরের নাচ আর সিক্সপ্যাক বডি ছাড়া আর কিছু ভালো লাগে নি। ইয়ামিন হক ববি সম্ভাবনাময়। তবে সব মিলিয়ে এরকম একটি সিনেমা করার সাহস দেখিয়েছেন ইফতেখার চৌধুরী আর ববি টাকা ঢেলেছেন ভালো কিছু করার জন্য। এর পরেরবার বিজলী-২ আসলে ভুলগুলো শুধরে নেবেন পরিচালক ও প্রযোজক এমনটাই কাম্য।
লেখক: চলচ্চিত্র নির্মাতা।