বিশেষ প্রতিবেদক :
এক সময়ের বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের অন্যতম দাপুটে প্রযোজক এ কে এম জাহাঙ্গীর খান। সত্তর ও আশির দশকের অনেক ব্যবসা সফল ছবি উপহার দিয়ে সিনেমা শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আলমগীর কবিরের সূর্যকন্যা, সীমানা পেরিয়ে, আমজাদ হোসেনের নয়ন মণি, অশোক ঘোষের তুফান ও বাদল, এফ কবীরের রাজ কন্যা, সওদাগর, পদ্মাবতীসহ প্রায় ৪৩টি ছবির প্রযোজক ও পরিবেশক তিনি। ‘চিত্রালী’ সম্পাদক প্রয়াত আহমদ জামান চৌধুরী ১৯৭৮ সালে তাকে ‘মুভি মোগল’ উপাধি দিলে তিনি এ নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। আর এ মুভি মোগলকে চলচ্চিত্রের সম্রাট আখ্যা দিয়ে তাঁর জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় সিক্ত করলেন সিনেমাবোদ্ধারা।
গত ২১ এপ্রিল এই প্রযোজকের ৭৯তম জন্মদিনের সন্ধ্যায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) জহির রায়হান মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় ‘মুভি মোগল এ কে এম জাহাঙ্গীর খান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সৈয়দ হাসান ইমাম, এটিএম শামসুজ্জামান, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, পরিচালক আমজাদ হোসেন, মুশফিকুর রহমান গুলজারসহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাঁর বিভিন্ন বিষয়ের স্মৃতিচারণ করেন।
আনিসুজ্জামান বলেন, আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের সঙ্গে জাহাঙ্গীর খানের নাম নিবিড়ভাবে জড়িয়ে গেছে। বাবার শাসন অগ্রাহ্য করে তিনি চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেছিলেন। যদিও চলচ্চিত্র প্রযোজনা থেকে এখন অনেক দূরে সরে আছেন, তারপরও মনটা চলচ্চিত্রেই পড়ে আছে। এখনো অতীত জীবনে স্মৃতি নেড়েচেড়ে আনন্দ পান এ কে এম জাহাঙ্গীর খান। আমরা চাই চলচ্চিত্রে এখন যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে এ কে এম জাহাঙ্গীর খানের সংযোগ যেন অব্যাহত থাকে।
‘মুভি মোগল এ কে এম জাহাঙ্গীর খান’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ফরিদুর রেজা সাগর। তিনি বলেন, চলচ্চিত্র জগতের সম্রাট এম এ জাহাঙ্গীর। মুভি মোগল হিসেবে তাঁকে নিয়ে সবাই গর্বিত। তিনি সব সময় সম্রাটের মতোই বাংলাদেশের মানুষের মনে থাকবেন, কারণ তিনি অনেক চমৎকার ছবি তৈরি করেছেন। যে ছবিগুলো তৈরি করেছেন, সেগুলো এখনো আমাদের জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে।
তিনি স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও পিপলস সিরামিকস ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক। বয়সের ভারে এখন তিনি সিনেমা শিল্প থেকে দুরে থাকলেও এখনও খোঁজ খবর রাখেন চলচ্চিত্রের বিভিন্ন বিষয়ে।
সত্তরের দশকের শুরু থেকে শিল্পপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর খান শুধুমাত্র সিনেমা শিল্পকে ভালবেসে এ পথে অর্থ লগ্নি করেন। সমাজ ও সংস্কৃতি, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধকে চলচ্চিত্রে তুলে ধরার চেষ্টায় তিনি ছিলেন তৎপর। মানসম্মত দর্শক নন্দিত সিনেমা দেখতে দর্শক হলে আসবে। আর দর্শক হলে আসলে সিনেমা ব্যবসাও করবে এ বিশ্বাস তাঁকে এ পখে প্রযোজনা করতে উৎসাহ জুগিয়েছে। সেই সময়ে একের পর এক সুপার হিট চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন তিনি। প্রযোজনা করেছেন, ডিস্ট্রিবিউটর ছিলেন। সিনেমা সংশ্লিষ্টদের সাথেও ছিলেন বন্ধুর মতো।
সিনেমা ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার পর তাঁর প্রযোজনা সংস্থার সব ছবির প্রিন্ট, ফটোসেট, পোস্টার, স্থির চিত্র তিনি বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে জমা দিয়েছেন। যেন পরবর্তী প্রজন্ম সে সময়ের চলচ্চিত্র নিয়ে চর্চা করতে পারে, গবেষণা করতে পারে। তাঁর চলচ্চিত্রগুলোই ফিল্ম আর্কাইভকে সমৃদ্ধ করেছে এককভাবে।