বিশেষ প্রতিবেদক :
বিশ্ব চলচ্চিত্রবোদ্ধা থেকে শুরু করে গা ছমছম করা থ্রিলার চলচ্চিত্র যারা পছন্দ করেন অথচ সাইকো দেখেননি এমন দর্শক খুঁজে পাওয়া ভার। এক বৃষ্টিস্নাত রাতে নর্মাণ নামের এক মোটেল মালিকের তত্ত্বাবধানের থাকা মোরিয়োনের রাত্রিযাপন ও তাঁর নিখোঁজ রহস্য নিয়ে সাইকো সিনেমার পুরো সময় টানা উত্তেজনা ও শ্বাসরুদ্ধকর প্রতীক্ষা। রিয়ার উইনডো সিনেমায় একজন পঙ্গু প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার জেফ। দুর্ঘটনায় পা হারিয়ে তিনি হুইল চেয়ারে বসে দিন কাটান নিজের বাসায়। কোন কাজ না পেয়ে তিনি সময় কাটানোর জন্য ক্যামেরা দিয়ে আশেপাশের প্র্রতিবেশীদের ছবি তুলেন। একসময় তিনি একটি খুনের আলামত দেখতে পান। তিনি তার এক বান্ধবী আর তার গোয়েন্দা বন্দুকে সেটি বললেও তা প্রমাণের কোন কারণই খুঁজে পাননা তিনি।
এরকম আরও অসংখ্য সাসপেন্স থ্রিলার সিনেমার নির্মাতা স্যার আলফ্রেড জোসেফ হিচকক। শুধু সারপ্রাইজ বা সাসপেন্স দেয়ার জন্য না সাসপেন্স ছবির মাস্টার অর্থ্যাৎ মাস্টার অব সাসপেন্স হিসেবে সর্বকালের জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা হিচকক বিশ্ব চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাছে অনুকরণীয়।
রিয়ার উইনডো, ভার্টিগো, ডায়াল এম ফর মার্ডার, রেবেকা, দ্য প্লেজার গার্ডেন, দ্য লুজার: অ্য স্টোরি অফ দ্য লন্ডন ফগ, দ্য রিং, ডাউনহিল, দ্য ফার্মার’স ওয়াইফ, ইজি ভার্চু, চ্যাম্পেগেন, দ্য ম্যানাক্সম্যান, ব্ল্যাকমেইল, জুনো অ্যান্ড দ্য পেকক, মার্ডার, এলসট্রি কলিংসহ অসংখ্য বিশ্বখ্যাত সিনেমা নির্মাণ করেন তিনি।
‘এন্টারটেইনমেন্ট উইকলি’ ম্যাগাজিনে বিশ্বের সেরা একশ চলচ্চিত্রের মধ্যে তার চারটি চলচ্চিত্র স্থান করে নেয়। ব্রিটেনের বিখ্যাত এম্পায়ার ম্যাগাজিনের ‘গ্রেটেস্ট ডিরেক্টরস এভার’ তালিকায় অর্জন করেন দ্বিতীয় স্থান। হিচকক গোল্ডেন গ্লোব, সিনেমা জাম্পো অ্যাওয়ার্ড, লরিয়াল অ্যাওয়ার্ড, , আমেরিকান ফিল্ম ইন্সটিটিউট অ্যাওয়ার্ড, ডিরেক্টরস গিল্ড অফ আমেরিকা অ্যাওয়ার্ডসহ পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি রানী এলিজাবেথের কাছ থেকে নাইট উপাধি পান।
কিংবদন্তী চলচ্চিত্র নির্মাতা আলফ্রেড হিচকক ১৮৯৯ সালের ১৩ আগস্ট লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা উলিয়াম হিচকক ও মা এমা হিচকক।
একাডেমিক শিক্ষায় তেমন সফলতা পাননি। কিন্তু ১৯১৮ সাল থেকে তিনি বিজ্ঞাপন নির্মাণ ডিপার্টমেন্টে কাজ শুরু করেন। বিজ্ঞাপন নিয়ে কাজ করতে করতে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এরপর চলচ্চিত্র ইন্ড্রাস্ট্রিতে বিভিন্ন বিভাগে কাজ করেন। আর্ট ডিরেক্টর, প্রোডাকশন ডিজাইনার, এডিটর, অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর এবং স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে কাজ করেন।
১৯২২ সালে তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ‘নাম্বার থার্টিন’ নির্মাণ শুরু করেন। কিন্তু তা অসম্পূর্ণই থেকে যায়। এরপর তিনি অসংখ্য সিনেমা নির্মাণ করেন। তাঁর একটি বিখ্যাত উক্তি সারপ্রাইজ নয় সাসপেন্স। অর্থাত মাস্টার অব সাসপেন্স।
এই অস্কারজয়ী নির্মাতা ১৯৮০ সালের ২৯ এপ্রিল ৮১ বছর বয়সে পরপারে পাড়ি জমান।