বিশেষ প্রতিবেদক :
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পিঁপড়াবিদ্যা সিনেমায় অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন নূর ইমরান মিঠু। অভিনয়ে জনপ্রিয়তা পেলেও লক্ষ্য ছিলো সিনেমা নির্মাণের। ‘টেলিভিশন’ সিনেমায় ফারুকীর সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। নির্মাণ করেছেন টেলিভিশন নাটক। এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে নির্মাণ করলেন চলচ্চিত্র ‘কমলা রকেট’। ছবিটি প্রযোজনা করেছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড। সিনেমার পরিবেশকের দায়িত্ব পালন করছে অভি কথাচিত্র। সম্প্রতি কমলা রকেট ও সিনেমা নিয়ে তাঁর ভাবনা নিয়ে কালচারাল ইয়ার্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা নূর ইমরান মিঠু।
কালচারাল ইয়ার্ড: পিঁপড়াবিদ্যা থেকে কমলা রকেট জার্নিটা কেমন ছিলো?
নূর ইমরান মিঠু: আমি মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ভাইয়ের অ্যাসিস্ট করতাম। পরবর্তীতে তিনি সিনেমায় অভিনয় করতে বললেন, সেই সুবাধে পিঁপড়াবিদ্যায় অভিনয় করা। কিন্তু আমার আগ্রহ ছিলো সব সময় ডিরেকশনে। আমি চলচ্চিত্র-ই বানাতে চাইতাম। অভিনয় করলেও ওটা লক্ষ্য ছিলো না। এমনি টেলিভিশনের জন্য নাটক বানাতাম। এক সময় ছবির জন্য প্রডিউসার পেয়ে গেলাম। তাই এবার ছবি বানালাম।
কালচারাল ইয়ার্ড: কমলা রকেট সিনেমার প্রেক্ষাপটটা কি?
নূর ইমরান মিঠু: কমলা রকেট একটা কাল্পনিক জাহাজ। যে জাহাজে একটা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ থাকবে। আমাদের সমাজে যেমন নানা স্তরের মানুষ থাকে। তেমনই কমলা রকেট এটি একটি ছোট দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। কমলা রকেট আসলে একটা মিনি বাংলাদেশ হয়ে ওঠে। এখানে নানা ধরণের মানুষ আছে।। কাল্পনিক ছোট জাহাজটার কাহিনী এভাবে আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগোয়।
কালচারাল ইয়ার্ড: এই গল্পটাই বেছে নেয়ার কারণ বা এতে কি ম্যাসেজ দিতে চান?
নূর ইমরান মিঠু: আমরা এ ছবির মাধ্যমে খোঁজার চেষ্টা করেছি মানুষের যে বেসিক জায়গায় সবাই এক। মানুষের ক্ষুধা, তৃষ্ণা, শীতের অনুভূতি ইংল্যান্ডে যেমন, আমেরিকায় তেমন; বাংলাদেশেও একই। ধনী-দরিদ্র সবাই একই জায়গায় এসে দাঁড়ায়। বেসিক জায়গাটা এক।
কালচারাল ইয়ার্ড: আমরা জানি সব ছবিরই কিছু টার্গেট অডিয়েন্স থাকে, কমলা রকেটের টার্গেট অডিয়েন্স কারা অর্থাৎ কোন ধরনের দর্শক আপনার ছবি দেখবে বলে মনে করেন?
নূর ইমরান মিঠু: একেবারে সাধারণ মানুষদের জন্য এই ছবিটা বানানো হয়েছে। আমি কোন উচ্চ পর্যায়ের জ্ঞানীদের জন্য ছবি বানাইনি। আমার দর্শক চারপাশের সাধারণ মানুষ। যারা সব সময় এ রকম লঞ্চে বাসে বা ফেরি করে চলাফেরা করে এবং এদের জীবনে নিত্যনৈমিত্তিক যে ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা দিয়েই বানানো কমলা রকেট।
কালচারাল ইয়ার্ড: কমলা রকেট ছবিকে আপনি কোন ধারায় ফেলবেন। আর্ট ফিল্ম নাকি কমার্শিয়াল ফিল্ম?
নূর ইমরান মিঠু: ফিল্ম মানে ফিল্ম। সব ফিল্মিই কর্মাশিয়াল ফিল্ম। যে ছবি মানুষ দেখবে এমন ছবিই আমি বানিয়েছি। অবশ্যই ব্যবসা করার উদ্দেশ্য তো আছেই। যেমন যদি আমি ১০ টাকা খরচ করি সেখানে যদি ৯ টাকা আসে তাহলে তো আমি পরে ছবিই বানাতে পারবনা। সেক্ষেত্রে সব ছবিই বাণিজ্যিক ছবি। বাণিজ্য করার জন্যই সব ছবি বানানো হয়। তবে সব ছবিতেই আর্ট থাকতে হয়। আর্ট থাকলেই যে ছবি ব্যবসা করবে না, তা কিন্তু নয়।
কালচারাল ইয়ার্ড: সিনেমা নিয়ে আপনার ভবিষ্যত ভাবনা কি?
নূর ইমরান মিঠু: ফিল্ম নিয়ে এমন কোনো উদ্দেশ্য আমার ছিলনা যে কাউকে খুশি করতে হবে। যেমন প্রডিউসারকে খুশি করতে হবে, কিংবা অডিয়েন্সকে খুশি করতে হবে এমনটা নয়। ছবিটা বানাতে গেলে যা যা লাগবে যে পন্থা অবলম্বন করতে হবে সেটাই আমি করেছি। আমি চেয়েছি আমাদের একটা ছবি হোক। এ ছবি দেখে ইন্ডিয়ার কোনো ছবি মনে হবে না। কেরালা, তামিল ছবি মনে হবে না। ইরানী ছবিও মনে হবে না। তবে এটা শুধু সস্তা বিনোদনের জন্য নয়, যে মাসালা থাকতে হবে। এমন কোনো সিনেমা বানাতে চাই না।
কালচারাল ইয়ার্ড: আপনার পরবর্তী পরিকল্পনা
নূর ইমরান মিঠু: সিনেমা নিয়ে আমার একটা ভবিষ্যত ভাবনা রয়েছে। যেমন বাংলাদেশের সিনেমার অবস্থা কিন্তু এখন খুবই খারাপ। এখন আর ছবির কোন প্রডিউসার নাই। আজ থেকে ২০-৩০ বছর আগে যেমন ১০০ জন প্রডিউসার ছিলো। সে হিসেবে এখন মাত্র ১ জন কি ২ জন। এখন সিনেমার যে অবস্থা তাতে কোনো প্রযোজকই আর ছবিতে টাকা লগ্নি করতে চান না। কারণ সে জানে সিনেমায় প্রডিউস করা মানে টাকা জলে ফেলা। আমার যে লক্ষ্য সেটা হচ্ছে কম টাকার মধ্যে বছরের পর বছর ছবি বানিয়ে যেতে চাই। এমনিতেই একটা সিনেমা বানাতে গেলে এখন দুই কোটি টাকা খরচ হয়। সেটাকে ব্যবসা করতে গেলে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা বাণিজ্য করতে হয়। আমি কিন্তু সেই ২০ কোটি টাকার দিকে তাকিয়ে নেই। আমি কম টাকার মধ্যে ছবি করতে চাই। সেখানে আমি আমার খুশিমত গল্প বলতে পারবো। সেখানে আমার ছবি মাচ পিপল না দেখলেও কোনো ক্ষতি না হয়। তবে মাচ পিপল আমার ছবি দেখলে আমি খুব খুশি হবো। আমি চাই সবাই হলে এসে আমার ছবি দেখুক। আমি ধারাবাহিকভাবে সিনেমা বানিয়ে যেতে চাই।