বাংলা গানের অন্যতম সুরস্রষ্ঠা শহীদ আলতাফ মাহমুদের অন্তর্ধান দিবসে তাঁর নামে দেওয়া ‘শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদক’ -এ এবার ভূষিত হলেন জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম ও ফেরদৌসি মজুমদার। গত কয়েক বছর ধরে শহীদ আলতাফ মাহমুদ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এ সম্মাননা পুরস্কার দেয়া হয়।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে এই দুই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের হাতে পদক, উত্তরীয় ও আর্থিক সম্মাননা তুলে দেয়া হয়।
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র মতো চির অম্লান গানের সুরকারআলতাফ মাহমুদ। আর তাঁর প্রাণের বন্ধু ও এক সময়ের সহযোদ্ধা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম বন্ধুর নামে দেয়া পুরস্কার পেয়ে আপ্লুত। বন্ধুর নামে পুরস্কার পেয়ে হাসান ইমাম তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, আলতাফ মাহমুদের নামে পদক পাওয়া অন্য যেকোনো পুরস্কারে চেয়ে বেশি গুরুত্বের আমার কাছে। স্বাধীনতা পদক বা একুশে পদক যেগুলো জাতীয় ভাবে আমি পেয়েছি, এগুলো তো সর্বোচ্চ পদক। কিন্তু এই ধরনের পদক আমাদের কাছে তার থেকেও অনেক বড় পাওয়া। তবে আলতাফকে যদি আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় পেতাম তবে আমাদের স্বাধীন বাংলা বেতার আরো অনেক সমৃদ্ধ হত। কিন্তু আমরা দুর্ভাগ্যক্রমে তাকে পাইনি। আলতাফ মাহমুদ আমাদের অত্যন্ত প্রিয় একজন বন্ধু। আর এই রকম একজন বন্ধুর নামে পুরস্কার এটা আমার কাছে বিরাট পাওয়া।
সম্মাননা পেয়ে প্রতাপশালী অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার বলেন, আলতাফ মাহমুদের সুর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কে বলে তিনি নেই, তিনি অমর হয়ে আছেন তার সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। তার স্মৃতিতে আজকের পদকপ্রাপ্তি আমার জন্য সত্যিই অনেক আনন্দের।
১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট মহান সুরকারআলতাফ মাহমুদকে পাকিস্তানি হানাদাররা বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর আর সন্ধান মেলেনি তাঁর। প্রতি বছরের ৩০ আগস্ট শহীদ আলতাফ মাহমুদকে আরও বেশি স্মরণ করে রাখতে ২০০৫ সালের এই দিনটিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল শহীদ আলতাফ মাহমুদ ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনটি এবার ১৪ তম বছরে পদার্পন করল।
সংগঠনটি নিয়ে শহীদ আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ বলেন, শহীদ আলতাফ মাহমুদ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠার পেছনে প্রাথমিকভাবে কাজ করেছেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। ফাউন্ডেশন নিয়ে কাজ করার জন্য যার কাছে আমি সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ। তিনি মূলত পুরো বিষয়টিকে আয়োজন করে আমাদের উপরে ছেড়ে দিয়েছিলেন। যেখানে আমি, শিমুল ইউসুফ, টিপু সেই সাথে আরো রয়েছে পরিবারের সবাই। এছাড়াও আরো আছে যারা নিস্বার্থ ভাবে নিজে থেকে কাজ করতে আগ্রহী তারাও।
বাবার অন্তর্ধান দিবসে গান নিয়েও একটা বড় আয়োজনের ইচ্ছে আছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, একটা জায়গা নিবো যেখানে ৩০ আগস্টের আগের দিন থেকেই সবাই গান করবে। যার যার গান নিয়ে সবাই হাজির থাকবে সেখানে। এমন না যে শুধু আলতাফ মাহমুদের গান থাকবে সেখানে, কারণ আলতাফ মাহমুদের কোন বাধ্যবাধকতা ছিলেন না। তিনি সবাইকেই স্বাগত জানাতেন। ৩০ আগস্টের এই অনুষ্ঠানটিকে আমি অন্তর্ধান থেকে উদযাপন করবার জন্য চাই। যাতে মানুষ শোককে শক্তিতে পরিনত করে উদযাপন করে। এটাই আমি চাই।