নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ…..। রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর লেখা এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া এই গানটি জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ ঠোঁট মিলিয়েছে ‘তোমাকে চাই’ সিনেমায়। এরকম অসংখ্য গানে ঠোঁট মিলেয়েছেন তিনি। সালমান শাহ’র কারণে জনপ্রিয়তার শীর্ষে এখনও অবস্থান করছে গানগুলো। আর এই গানগুলো ভক্তকুলের হৃদয়ে সালমান শাহ’কে স্মরণে নিয়ে আসছে বারবার। আজ ২২ বছর হলো প্রয়াত হয়েছেন বাংলা চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র চিত্রনায়ক সালমান শাহ। তাঁর উদ্দেশ্যে ভক্তদের দিস্তা দিস্তা চিঠি দেড় যুগ ধরে আকাশের ঠিকানায় জমা হচ্ছে। সালমান কি পাচ্ছে সে সব চিঠি? অজানাই থেকে যাবে তা। এরপরও তাঁর ভক্তরা পাঠিয়ে যাবে আকাশের ঠিকানায় চিঠি।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মাত্র ২৬ বছর বয়সে ক্ষণজন্মা নায়ক সালমান শাহ পরলোক গমণ করেন। ২২ বছরেও কমেনি তাঁর এতটুকু জনপ্রিয়তা। বরং দিনে দিনে বেড়েছে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা। তরুণদের চিরঞ্জীব আইকন হয়ে আছেন তিনি। চিত্রজগতের উজ্জ্বল তারা হয়ে থাকবেন তিনি। তাঁর অসংখ্য ভক্ত, শুভাকাঙ্খী ও সহকর্মীরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে তাঁকে। দোয়া, মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে কামনা করছে তাঁর আত্নার মাগফিরাত। সালমান শাহ’কে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে ‘কালচারাল ইয়ার্ড’ পরিবার। তিনি ভালো থাকুক, আমরা আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখতেই থাকবো।
শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। জন্ম ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটে। বাবার নাম কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মায়ের নাম নীলা চৌধুরী। খুলনার বয়রা মডেল হাই স্কুলে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু। ১৯৮৭ সালে ধানমন্ডি আরব মিশন স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। ধানমন্ডির মালেকা সায়েন্স কলেজ থেকে বি.কম পাস করেন তিনি। ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট ভালোবেসে বিয়ে করেন সামিরা হককে। আশির দশকে কিশোর বয়সে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘আকাশ ছোঁয়া’ নাটকে অভিনয় করার মাধ্যমে অভিনয় জীবন শুরু। ১৯৯৩ সালে পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চিত্রনায়ক হিসেবে আত্নপ্রকাশ। নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় সালমান শাহ। সেই নামটিই চিরস্মরণীয় হয়ে আছে চিত্রজগতে। ক্যারিয়ারে প্রথম ছবিতে অভিনয় করেন মৌসুমীর সঙ্গে। পরে সফল জুটি গড়ে তুলেন চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে। এ জুটির মোট অভিনীতি চলচ্চিত্র ১৪টি। সালমান শাহ অভিনয় করেছে মোট ২৭টি চলচ্চিত্রে। তাঁর অভিনীত প্রায় সবক’টি চলচ্চিত্রই দর্শকদের মন ছুঁয়ে গেছে। পেয়েছেন তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা।
আজকের এই দিনে ঢাকার ইস্কাটনস্থ নিজ বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় তাঁর মরদেহ। প্রথমে সালমান শাহ’র বাবা কমর উদ্দিন অপমৃত্যুর মামলা করেন। পরে দায়ের করা হয় হত্যা মামলা। তবে সালমান শাহ’র স্ত্রী সামিরার দাবি এটা ছিলো আত্মহত্যা। কিন্তু সালমান শাহ’র পরিবারের পক্ষ থেকে সামিরা, তাঁর পরিবার এবং ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে সালমান হত্যার অভিযোগ তোলা হয়।
সালমান শাহ’র মুত্যু আজও এক রহস্য। আত্নহত্যা নাকি হত্যা এ নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াসা। পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা বিভাগের হাত ঘুরে পুলিশের কাছে এখন এ মামলার তদন্তভার। কিন্তু কোন কুলকিনারা হচ্ছেনা এ মৃত্যু রহস্যের। সালমান শাহ হত্যা মামলার তদন্ত দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বরে আদালত পিবিআইকে মামলাটির পুনঃরায় তদন্ত করার নির্দেশ দেন।
দীর্ঘদিন পর সাক্ষী খুঁজে না পাওয়ার সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে ২ বছর ধরে তদন্তের দায়িত্বে থাকা সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) জানিয়েছে, সালমান শাহ’র মৃত্যু রহস্যের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। এদিকে নির্ধারিত দিন গত ২০ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে না পারায় আগামী ১৮ নভেম্বর তা দাখিলের আদেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস।
গত ২০ নভেম্বর পিবিআইর দেয়া ‘অগ্রগতির’ প্রতিবেদনে আসেনি নতুন কিছু। প্রতিবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম জানান, সালমান শাহের মা নিলুফা চৌধুরী ওরফে নীলা চৌধুরীকে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। সাক্ষী হিসেবে হুমায়ুন কবির, আ. সালাম, দেলোয়ার হোসেন শিকদার, আ. খালেক হাওলাদার, বাদল খন্দকার (চলচ্চিত্র পরিচালক), শাহ আলম কিরণ (চলচ্চিত্র পরিচালক), মুশফিকুর রহমান গুলজার (চলচ্চিত্র পরিচালক), এস এম আলোক সিকদার ও হারুন আর রশিদকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।
সিরাজুল বলেন, সালমান শাহের অপমৃত্যুর মামলাটি অনেক পুরনো। মামলায় যেসব সাক্ষী করা হয়েছে তাদের অধিকাংশ নির্ধারিত ঠিকানায় না থেকে নতুন ঠিকানায় চলে গেছেন। র্নিধারিত ঠিকানায় সাক্ষীরা না থাকায় তাদের পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। এরপরও তাদের খোঁজার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে দ্রুত সালমান শাহ মৃত্যু রহস্যের সমাধান করা হোক এটাই সবার দাবি। এফডিসির ভিতরে স্মরণীয় করে রাখতে জহির রায়হান, জসিম ও মান্নার মতো কোন স্থাপনা বা রাস্তা করা হোক এটা দাবি করেন তার ভক্তরা।
চিত্রনায়ক সালমান শাহ’র মৃত্যুদিনে তাঁকে স্মরণ করছে ভক্তরা। করা হচ্ছে নানা দোয়া ও আলোচনা অনুষ্ঠান। টেলিভিশনগুলো প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সালমান শাহ স্মরণে বাদ আসর এফডিসিতে কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। সমিতির স্টাডি রুমে এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হয় । ‘সালমান শাহ স্মৃতি সংসদ’ ভিন্ন ভিন্ন আয়োজনে স্মরণ করছে তাদের প্রিয় নায়ককে। আয়োজনের মধ্যে ছিলো মিলাদ মাহফিল, শোক র্যালি, কাঙ্গালিভোজ, পথশিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ।
সালমান শাহকে নিয়ে আরও নিউজ:
অন্তরে অন্তরে সালমান শাহ
স্বপ্নের নায়ক সালমান শাহ