নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কিংবদন্তী লেখক, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটক নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ৭০তম জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীতে মঙ্গলবার বসে হুমায়ূন মেলা। চ্যানেল আই প্রাঙ্গণের চেতনা চত্বরে সপ্তমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় ‘আনোয়ার সিমেন্ট-চ্যানেল আই হুমায়ূন মেলা’।
১১টা ২৮ মিনিটে হলুদ বেলুন উড়িয়ে হলুদ পাঞ্জাবি ও নীল শাড়িতে হিমু ও রুপারা উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। জন্মদিন উপলক্ষে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে স্থাপিত বিশেষ উন্মুক্ত মঞ্চে পরিবেশিত হয় হুমায়ূন আহমেদের লেখা গান এবং তার স্মরণে স্মৃতিকথা বলেন অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনরা। সারাদিন চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে ছিলো গান, চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ে ও অন্যান্য নৃত্যশিল্পীদের নৃত্য, হুমায়ূন আহমেদের লেখা থেকে আবৃত্তি পরিবেশনা এবং বিভিন্ন বয়সী শিশুশিল্পীদের চিত্রাঙ্কন। মেলা সরাসরি সম্প্রচারিত হয় চ্যানেল আই টিভি, চ্যানেল আইয়ের ফেসবুক পেজ ও রেডিও ভূমি’তে। কথা বলেন বিভিন্ন অঙ্গণের বিশিষ্ট ব্যাক্তিরা।
চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ বলেন, আমাদের দেশের সাহিত্যের আকাশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হুমায়ূন আহমেদ। মধ্যবিত্ত বাঙ্গালির চেতনার গভীরে গিয়ে তিনি এমন সব সাহিত্য কর্ম রচনা করেছেন, যেগুলো কখনো মুছে যাবে না। দেশে নতুন প্রজন্মের পাঠক নির্মাণে হুমায়ূন আহমেদের বিশাল অবদান আছে। তার বিভিন্ন গল্পের চরিত্রে অদ্ভুত সব বিষয় আছে, তার মধ্যে হিমু একজন। এই চরিত্রে যেমন দুখ-বেদনা ও আনন্দ আছে, আছে তরুণদের সঠিক ভাবে বেড়ে ওঠার অনুপ্রেরণা। আমরা চাইবো হুমায়ূন মেলার মধ্য দিয়ে আমাদের তরুণরা শুদ্ধ সংস্কৃতি এবং মানবিক চেতনায় বড় হয়ে উঠুক এবং দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাক।
নাট্য নির্দেশক ও গুণী অভিনেতা রামেন্দু মজুমদার বলেন, হুমায়ূন আহমেদ গল্প বলার জাদু জানতেন। ধারাবাহিক তৈরি করার সময় কীভাবে সিচুয়েশন তৈরি করতে হয়, সেটাও তিনি ভালো জানতেন। তিনি নিজস্ব পাঠক তৈরি করতে পেরেছিলেন। হুমায়ূনের জয় হোক। নির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে উদযাপন হয় তার লেখনি শক্তির জন্য। হুমায়ূন আহমেদ আমাদের সামনে যে চরিত্রগুলো দাঁড় করিয়েছেন, সেটা হিমু হতে পারে, মিসির আলি হতে পারে, বাকের হতে পারে, সেই চরিত্রগুলো একটি চেনা এবং অচেনা জগত তৈরি করেছিল। মানুষ যে ভাষায় কথা বলে, সে ভাষার ব্যবহারের কারণে তিনি সাধারণ মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেন। সম্ভবত তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে সাধারণ মানুষের মাঝে পাঠ অভ্যাস গড়ে তুলেছিলেন। এই পাঠ অভ্যাস প্রায় ছিল না বললেই চলে। মধ্যবিত্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, হুমায়ুনের কারণে সেটা নিম্নবিত্ত ও উচ্চবিত্ত সর্বগ্রাসী হুমায়ুন হয়ে উঠলো।
এদিকে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭০তম জন্মদিন পালন করা হয় নানা আয়োজনে। মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিটে নুহাশ পল্লীতে মোমবাতি প্রজ্বালন, সকালে কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, পায়রা উড়িয়ে ও কেক কেটে হুমায়ূনকে স্মরণ করেন তার স্বজন ও ভক্তরা।
হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, তাদের দুই ছেলে নিশাদ ও নিনিত উপস্থিত ছিলে সেখানে। জন্মদিন উপলক্ষে নুহাশ পল্লীর ভাস্কর আসাদ খানের দিনব্যাপী একক শিল্পকর্মের প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
হুমায়ুন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তার ডাক নাম ছিল কাজল। বাবার রাখা তার প্রথম নাম শামসুর রহমান। পরে তিনিই আবার ছেলে নাম বদলে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ।
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই মারা যান হুমায়ূন আহমেদ। গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে দাফন করা হয় তাঁকে।