নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তিনি। একসময় ছিলেন বিরোধীদলীয় নেতাও। দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগের সভানেত্রী তিনি। সবচেয়ে বড় কথা তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্রষ্টা, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বড় কন্যা। কারও কাছে জননেত্রী, কারও কাছে সফল রাষ্ট্রনায়ক আর বিশ্বনেতা শেখ হাসিনা। তবে সব কিছু ছাপিয়ে তিনি একজন মা, একজন বোন আর একজন দাদি, নানী। প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার অজানা গল্প, তাঁর একান্ত বেদনা, পরিবার-স্বজন হারানোর গল্প এবারে উঠে আসছে চলচ্চিত্রে।
বঙ্গবন্ধু কন্যার এই অদেখা জীবনের গল্প নিয়ে তৈরি ডকুড্রামা ‘হাসিনা: আ ডটার’স টেল’ আগামী ১৬ নভেম্বর শুক্রবার বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্স ও যমুনা ব্লকবাস্টারসহ দেশের ৪টি সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে। বৃহস্পতিবার ১৫ নভেম্বর বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে হবে এর প্রিমিয়ার শো।
মঙ্গলবার এ ছবির বিষয়ে জানাতে ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিটিউটে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন এ ছবির নির্মাতা পিপলু খান ও নির্বাহী প্রযোজক সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) নির্বাহী পরিচালক সাব্বির বিন শামস।
নির্বাহী প্রযোজক সাব্বির বিন শামস বলেন, এ ছবির মূল উপজীব্য হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার অজানা-অদেখা গল্পগুলোর সমষ্টি। রাজনীতিবিদ আর রাষ্ট্রনায়কের অন্তরালে থাকা একজন শেখ হাসিনার অজানা গল্প অজানা দিক তুলে ধরা হয়েছে ছবিতে। আছে এক রাতেই বাবা-মা-ভাইদের হারিয়ে নির্বাসিত জীবনে বুকের গভীরে কষ্ট চেপে কীভাবে আবার ঘুরে দাঁড়ালেন সেই সংগ্রামের কথা।
সাব্বির বলেন, ‘আমরা রাজনীতির মঞ্চে শেখ হাসিনাকে বহুবার দেখেছি। তাকে দেখেছি হাসতে, দেখেছি কাঁদতে। কিন্তু কখনও দেখিনি একান্ত নিভৃতে একা মানুষটাকে; একটি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনাকে। আমরা সেভাবে তার গল্পটা জানি না। পরিবারের সবাইকে হারিয়ে একা এতগুলো দিন সেই ভীষণ কষ্টের বোঝা একা বয়ে চলেছেন যিনি, তারও তো একটা গল্প আছে। এই ডকুমেন্টারিতে সেই অদেখা মানুষটার অন্য জীবনের গল্প জানবে সবাই।’
নির্মাতা পিপলু খান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা, যার জীবনে এত উত্থান-পতন রয়েছে, আমার কাছে মনে হয়েছে আমি কী করে এই ছবিটাকে আরও বিস্তৃত করে তুলে ধরতে পারি। আমাকে খুব স্বাভাবিকভাবেই আকর্ষণ করেছে তার জীবনের সাহসের সঙ্গে উত্থানের গল্প। তাছাড়া শেখ রেহানার কথাও এখানে খুব স্বাভাবিকভাবে চলে আসে। কারণ তারা দুই বোন হরিহর আত্মা। পরস্পরের জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’
কাজ করতে গিয়ে এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহচর্য পাওয়ার কথা বলেন নির্মাতা পিপলু। তিনি বলেন, ‘যখন প্রথম কাজ করি, তাকে জানিয়েছিলাম, আপনাকে আপা বলতে চাই। আমি আমার চারজন বোনের সঙ্গে বড় হয়েছি। আমার মনে হয়েছে তাকে নিয়ে একটা ডকুমেন্টরি করতে হলে তার সাথেও আমার সম্পর্কের একটা জায়গায় যেতে হবে। আমি তাকে (শেখ হাসিনা) জানিয়েছিলাম, আপনার কিচ্ছু করতে হবে না। কেবল মনে করবেন, আমি আপনার একজন ভাই। প্রথম দুই বছর তিনি আমাকে ‘এই ছেলে’ বলে ডাকতেন। তারপর ধীরে ধীরে তিনি আমাকে পিপলু নামে ডাকতে শুরু করেন।’
পিপলু স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘১৪ দিন ৩২ নম্বরে শুটিং হয়েছে। খেয়াল করলাম, সেখানে দেখার মতো কত কিছু আছে! অথচ যেই পরিবারটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেই সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি? ঠাকুর বাড়িতে কী রান্না হত, সেটা আমরা জানি, অথচ জাতির জনকের স্ত্রীর নাম রেনু, এটা আমার ছেলে জানে না কেন? সুলতানা কামাল কত সুন্দর করে শাড়ি পড়তেন, এটা আমাদের মেয়েরা ফলো করে না কেন? খুব সাধারণ বিষয় মনে হতে পারে, তবুও আমাদের একটা রিসার্চ টিম ছিল। ডকুমেন্টরিতে তারা অনেকগুলো বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তুলে এনেছেন।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পিপলু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্লোরিফাই করতে নয়। কোনো রাজনৈতিক বিষয়কে বিবেচনায় নিয়েও নয়, বরং একটি দেশের ইতিহাসের একটি সময়কে ৭০ মিনিটে তুলে আনতে চেষ্টা করা হয়েছে।’
সিআরআইর ব্যানারে প্রামাণ্যচিত্রটির প্রযোজক রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও নসরুল হামিদ বিপু। সঙ্গীতায়োজনে ছিলেন দেবজ্যোতি মিস্ত্র, সিনেমাটোগ্রাফিতে সাদিক আহমেদ, সম্পাদনা করেছেন নবনীতা সেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিআরআইর ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর শিবু কুমার শিল, গ্রে ঢাকার হেড অ্যান্ড ম্যানেজিং পার্টনার সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন।