বাংলা লোকসংগীতের জনপ্রিয় শিল্পী কাঙালিনী সুফিয়া গত তিনদিন ধরে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। মঙ্গলবার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু টাকার অভাবে হচ্ছেনা তাঁর উন্নত চিকিৎসা সেবা। প্রধানমন্ত্রীর সঞ্চয়পত্র ছাড়া অন্য কোন আয়ও নেই। কেউ এখন পর্যন্ত এগিয়ে আসেনি তার সাহায্যে। তবে কি কাঙালিনী সুফিয়াকে ধুঁকে ধুকে মরতে হবে এমন প্রশ্ন স্বজনদের।
তাঁর মেয়ে পুষ্প বেগম জানিয়েছেন, ‘টাকার অভাবে মায়ের চিকিৎসা করতে পারছি না। আমার হাতে যে টাকা ছিল, সেটা প্রথম দিনে শেষ হয়ে গেছে। এখন মনে হচ্ছে, চিকিৎসা না করিয়ে বাসায় নিয়ে যেতে হবে। কাঙালিনী সুফিয়াকে দেখতে বা তার সাহায্যে এখন পর্যন্ত কেউ এগিয়ে আসেনি বলে জানান পুষ্প বেগম।
তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে মা অজ্ঞান হয়ে যান। তাড়াতাড়ি পাশের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে তারা মায়ের অবস্থা দেখে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু আমার কোনো পরিচিতজন ঢাকায় নেই। যে কারণে রাত ১২টার দিকে সাভারের এই হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে ডাক্তার পরীক্ষা করে জানিয়েছে তাঁর ব্রেইন স্ট্রোক হয়েছে। একদিন তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখার পর বুধবার কেবিনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’
প্রধানমন্ত্রী সঞ্চয়পত্র দিয়েছিলেন জানিয়ে পুষ্প বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী মাকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকার সঞ্চয়পত্র দিয়েছেন। কিন্তু এই টাকা দিয়ে কোনোভাবে ভাত খেয়ে মাস পর হয়। মায়ের গলায় সমস্যা প্রায় দুই বছর ধরে। কোনো অনুষ্ঠানে গান গাইতে যেতে পারেন না। যে কারণে বাড়তি কোনো টাকা নেই। মনে হচ্ছে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হবে কাঙালিনী সুফিয়াকে।’
সাভারের টিঅ্যান্ডটি কলোনিতে একটি টিনশেড ঘরে মেয়ে পুষ্প ও নাতনিকে নিয়ে থাকেন সুফিয়া। শিল্পী কাঙালিনী সুফিয়া ১৯৬১ সালে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দির রামদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৪ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়।
বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় স্বামীর নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে মেয়ে পুষ্পকে নিয়ে ঘর ছাড়েন। একসময় হাইকোর্ট আর শাহ আলীর মাজারই ছিল কাঙালিনী সুফিয়ার ঘরবাড়ি। এখানে-ওখানে গান গাওয়ার ডাক এলে ছুটে যেতেন। একদিন শিল্পকলা একাডেমির একটি অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে পরিচিতি পান। এরপর দেশে বিদেশে গান গাইতে শুরু করেন। এরপর হয়ে উঠেন কাঙালিনী সুফিয়া।