নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেতা, নির্মাতা ও গীতিকার আমজাদ হোসেন শেষবারের মতো হাজারো চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষের অশ্রুসিক্ত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় সিক্ত হলেন। সকাল ১১টায় শহীদ মিনারে আমজাদ হোসনের মরদেহ। তাঁকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে একটু শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেন হাজারো মানুষ। সেখানে ছিলেন তাঁর দীর্ঘদিনের সহকর্মী, সহযোদ্ধা আর নবীন শিল্পীরাও। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমজাদ হোসেনকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়।
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, ডিরেক্টরস গিল্ড, নাট্যকার সংঘ, জাসস, শর্ট ফিল্ম ফোরামসহ চলচ্চিত্র সংসদগুলো ও চলচ্চিত্র সংগীতের বিভিন্ন সংগঠন আমজাদ হোসেনের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান, সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসূফ বাচ্চু, সৈয়দ হাসান ইমাম, নাট্যকার মামুনুর রশিদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা মসিহউদ্দিন শাকেরসহ সাংস্কৃতিক ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যাক্তিরা। শ্রদ্ধা জানায় বাংলা একাডেমি, এফডিসি, চ্যানেল আইসহ রাষ্ট্রীয় সংগঠনগুলো। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের সংস্কৃতিমনা ও চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষ।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন এর সামনে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তাঁর প্রিয় অঙ্গন দীর্ঘদিনের কাজের জায়গা এফডিসিতে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর মরদেহ। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে এক হৃদয়বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয়। বাতাসে ভেসে বেড়ায় চাপা কান্নার শব্দ। অশ্রুজলে সেখানে তাঁকে বিদায় জানান তাঁর সতীর্থরা। অশ্রুসজল চোখে প্রিয় মানুষকে শেষবারের মতো বিদায় জানাতে উপস্থিত ছিলেন কিংবদন্তী অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান, চিত্রনায়ক আলমগীর, ফারুক, ইলিয়াস কাঞ্চন, গোলাপী এখন ট্রেনে’র গোলাপী চরিত্রের নায়িকা ববিতা, চিত্রনায়িকা চম্পা, সুচরিতাসহ এ প্রজন্মের শিল্পীরা। উপস্থিত ছিলেন নির্মাতা গুলজার আহমেদ, সোহানুর রহমান সোহান, বদিউল আলম খোকনসহ অনেকে। সেখানে বাদ যোহর হয় নামাজে জানাজা।
ষাটের দশক থেকে এ পর্যন্ত অনেক কালজয়ী সিনেমার নির্মাণ করেছেন আমজাদ হোসেন। এর বেশিরভাগ শুটিং করতেন এফডিসিতে। তাঁর পদচারণায় মুখরিত থাকতো এফডিসি প্রাঙ্গণ। সেই প্রাঙ্গণেই পৌছেন তিনি। তবে নিথর দেহে। আর তাঁর দেহকে ঘিরে শোকের মাতম চলে যেন সবার।
এরপর তাঁর মরদেহ নেওয়া হয় চ্যানেল আইয়ের চেতনা চত্বরে। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় তাঁর দ্বিতীয় নামাজে জানাজা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ, অভিনেতা ও নাট্যকার মামুনুর রশিদ, অভিনেতা আফজাল হোসেন, বাচসাস সভাপতি আবদুর রহমান, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক (বিক্রয় ও বিপণন) ইবনে হাসান খান, নির্মাতা গুলজার আহমেদ, ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাহউদ্দিন লাভলু, সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক, আমজাদ হোসেনের দুই পুত্র সাজ্জাদ হোসেন দোদুল ও সোহেল আরমান সহ মিডিয়ার বিশিষ্ট মানুষরা।
সেখানে আমজাদ হোসেনের সঙ্গে থাকা নিজেদের স্মৃতির ঝাঁপি খুলেন তারা। স্মরণ করেন এই কিংবদন্তীকে। তার আত্নার শান্তি কামনা করেন।
আমজাদ হোসেনের প্রতি শোক প্রকাশ করে শাইখ সিরাজ বলেন, আমজাদ হোসেন ছিলেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অভিভাবক। গত কয়েক দিনে আমরা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেককে হারিয়েছি। আলোকচিত্রশিল্পী আনোয়ার হোসেন, চলচ্চিত্র নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুল, সরকার ফিরোজ আর এখন বিদায় জানাতে হচ্ছে আমজাদ হোসেনকেও। এটা আমাদের জন্য বেদনার।
আমজাদ হোসেন অসুস্থ হওয়ার পর তার চিকিৎসায় সহায়তা ও ব্যাংকক থেকে দেশে নিয়ে আসতে চ্যানেল আই এগিয়ে আসায় চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আমজাদ হোসেনের দুই ছেলে সাজ্জাদ হোসেন দোদুল ও সোহেল আরমান।
জামালপুরে নিজের বাবার কবরে শায়িত করা হবে আমজাদ হোসেনকে। সেখানেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাঁকে।