নিজস্ব প্রতিবেদক:
চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন কিংবদন্তী চলচ্চিত্রকার, অভিনেতা, নির্মাতা ও গীতিকার আমজাদ হোসেন। শেষ ইচ্ছানুযায়ী জামালপুর শহরের পৌর কবরস্থানে রোববার সকালে বাবা-মায়ের কবরের পাশেই দাফন করা হয় তাঁকে।
এর আগে সকাল ১১ টায় জামালপুর সদর হাইস্কুল মাঠে আমজাদ হোসেনের পঞ্চম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এই কিংবদন্তী চলচ্চিত্রকারকে একনজর দেখতে ভিড় জমায় অসংখ্য মানুষ। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় চলচ্চিত্রপ্রেমী সংগঠনগুলো। শনিবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেশের চলচ্চিত্রপ্রেমী সর্বস্তরের মানুষ তাঁকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন, এফডিসি ও তেজগাঁওয়ের চ্যানেল আই কার্যালয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এফডিসিতে হয় তাঁর প্রথম জানাজা ও চ্যানেল আই প্রাঙ্গনে হয় তৃতীয় নামাজে জানাজা।
গত শুক্রবার দুপুরে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমজাদ হোসেন মারা যান। এর আগে গুরুতর অসুস্থ হলে গত ১৮ নভেম্বর রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় ২৮ নভেম্বর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে। সেখানে জরুরী বিভাগে তাঁর চিকিৎসা চলছিলো।
আমজাদ হোসেন ১৯৪২ সালের ১৪ই আগস্ট জামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শৈশব থেকেই সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। তিনি সাহিত্য ও নাট্যচর্চার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এরপর তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তাঁর হাতে খড়ি। এরপর আরও কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এরপর তিনি জহির রায়হানের সঙ্গে সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৬৭ সালে ‘জুলেখা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পরিচালনা শুরু করেন তিনি।
১৯৭৮ সালে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ১৯৮৪ সালে ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তাঁর পরিচালিত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে, পিতাপুত্র, বাল্যবন্ধু, এই নিয়ে পৃথিবী, নয়নমণি, সুন্দরী, কসাই, জন্ম থেকে জ্বলছি, দুই পয়সার আলতা, সখিনার যুদ্ধ, হীরামতি, প্রাণের মানুষ, সুন্দরী বধূ, কাল সকালে, গোলাপী এখন ঢাকায়, গোলাপী এখন বিলেতে ইত্যাদি।
শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত হন। এছাড়া স্বাধীনতা পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার।