নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা নির্মাতা, চলচ্চিত্র সম্পাদক, চলচ্চিত্র সংসদকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধা সাইদুল আনাম টুটুল স্মরণে আলোচনা সভা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এ আয়োজনে সম্মিলিতভাবে সবাই টুটুল স্মরণে একটি স্মরণিকা বের করার প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাবের পক্ষে নিজের অবস্থানের কথা জানিয়ে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী জানান, নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুলকে নিয়ে শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে স্মরণিকা করা হবে। এ ছাড়া চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সকল কাজে শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তন বিনা খরচে ব্যবহার করার কথাও জানান তিনি।
মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে জাতীয়ভাবে সাইদুল আনাম টুটুল স্মরণে আলোচনা সভা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে ও তাঁর প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে ও ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক বেলায়াত হোসেন মামুনের সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম, মসিহউদ্দিন শাকের, হাশেম সূফী, সৈয়দ হাসান ইমাম, ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সভাপতি ডা. লাইলুন নাহার স্বেমি, বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের সভাপতি জাহিদুর রহিম অঞ্জন, বাংলাদেশ প্রামাণ্যচিত্র পর্ষদের সভাপতি ফরিদুর রহমান, ডিরেক্টর’স গিল্ডের সভাপতি সালাহউদ্দিন লাভলু, চলচ্চিত্র শব্দ শিল্পী রতন পাল, শিল্পী মোস্তফা মনোয়ারসহ টুটলের স্ত্রী মোবাশ্বেরা খানম, দুই মেয়ে ঐশী আনাম ও অমৃতা আনাম তাঁর স্মৃতিচারণ করে কথা বলেন।
শিল্পী মোস্তফা মনোয়ারের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সাইদুল আনাম টুটুল পাপেট শো করেন। মোস্তফা মনোয়ারের নির্মিত নাটক ‘রক্তকবরী’তে অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান তিনি। এ নাটকে সাইদুল আনাম টুটুলের অভিনয় দেখে উচ্ছসিত প্রশংসা করেন বাংলা চলচ্চিত্রের সেরা চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিত রায়। সত্যজিত রায় টুটুলের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন মোস্তফা মনোয়ারের কাছে। সাইদুল আনাম টুটুলকে নিয়ে স্মৃতিচারণে এ সব বিষয় তুলে আনেন এই পাপেটশিল্পী।
চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে সাইদুল আনাম টুটুলের সঙ্গে চলচ্চিত্র আন্দোলনের দিনগুলো ও তাঁর চলচ্চিত্র সম্পাদনা করার সময়ের নানা স্মৃতি তুলে ধরেন। সাইদুল আনাম টুটুল মোরশেদুল ইসলামের আগামী, দীপু নাম্বার টু, দুখাই চলচ্চিত্রের সম্পাদনা করেন। এই চলচ্চিত্রগুলো সম্পাদনার মধ্য দিয়ে ছবিগুলো এক অন্য মাত্রা নেয় বলেও স্মরণ করেন মোরশেদুল ইসলাম।
চলচ্চিত্র নির্মাতা মসিহউদ্দিন শাকের তাঁর নির্মিত ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’ চলচ্চিত্রে সম্পাদনায় সাইদুল আনাম টুটুলের মুন্সিয়ানার কথা তুলে ধরেন। এ সময় তাঁর স্মৃতিচারণ করে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তিনি।
চলচ্চিত্রকার সৈয়দ হাসান ইমাম সাইদুল আনাম টুটুলের সৃষ্টি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন। ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সভাপতি ডা. লাইলুন নাহার স্বেমি ও সাধারণ সম্পাদক বেলায়াত হোসেন মামুন সাইদুল আনাম টুটুলের স্মরণে স্মরণিকা বের করার কথা বলেন। এছাড়া তাঁর সৃষ্টি সংরক্ষেণের উদ্যোগের কথাও বলেন তারা।
ডিরেক্টর’স গিল্ডের সভাপতি সালাহউদ্দিন লাভলু এই সংগঠনের আজীবন সদস্য ও এই সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইদুল আনাম টুটুলের কথা স্মরণ করে বলেন, টেলিভিশন নাটেকের এক নতুন ধারা তৈরি করেছেন সাইদুল আনাম টুটুল। তিনি নিজেই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তিনি একজন ভালো মানুষ, ভালো শিক্ষক। সাইদুল আনাম টুটুলের হাতেই আমার নাটকের ক্যারিয়ার শুরু।
স্মরণ সভায় সাইদুল আনাম টুটুলের দুই মেয়ে ঐশী আনাম ও অমৃতা আনাম তাঁদের বাবার কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তারা বলেন, বাবার সঙ্গে কাটানো আগের সময়গুলো ছিলো তাদের জীবনের সবচেয়ে ভালো সময়। এরকম ভালো সময় আমাদের জীবনে আর হবেনা।
স্মরণ আয়োজনের শেষে সাইদুল আনাম টুটুল নির্মিত চলচ্চিত্র ‘আধিয়ার’ প্রদর্শন করা হয়।