বিশেষ প্রতিবেদক :
আসছে বছরের প্রথম দিন নৃত্যশিল্পী বুলবুল চৌধুরীর জন্মশতবার্ষিকী। এ উপলক্ষে বছরব্যাপী তাঁর জন্মশতবর্ষ পালন করার উদ্যোগ নিয়েছে যৌথভাবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা। এ শিল্পীর সৃষ্টি ও কর্ম নিয়ে আয়োজন থাকছে পুরো বছর জুড়ে।
আয়োজনের মধ্যে রয়েছে, উদ্ধোধনী অনুষ্ঠান, নৃত্য গবেষকদের লেখা নিয়ে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ, এপ্রিল মাসে আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসে নৃত্য উৎসব আয়োজন, দেশব্যাপী নৃত্য প্রতিযোগিতা, নৃত্যনাট্য উৎসব, ‘বুলবুল চৌধুরী’র নৃত্যধারা বিষয়ক সেমিনার, গুণী শিল্পীদেরকে সম্মাননা প্রদানসহ বছরব্যাপী নানা কর্মযজ্ঞ।
গত বৃহস্পতিবার বছরব্যপী নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরীর জন্মশতবর্ষ আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা সেমিনার কক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি মিনু হক, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, নৃত্যশিল্পী আমানুল হক, একাডেমির পরিচালক ড. কাজী আসাদুজ্জামান, জসিম উদ্দীন ও সোহরাব উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে লিয়াকত আলী লাকি জানান, আমাদের এই ভূখন্ডে রবীন্দ্রনাথের পরই নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরী’র নৃত্যশিল্পে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত সৃষ্টি রয়েছে। আশা করছি, সকলে মিলে নতুন বছরে নৃত্যের কর্মযজ্ঞের মধ্যে কাটাতে পারবো।
মিনু হক বলেন, জানুয়ারি মাসে বড় আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে বছরব্যাপী এই কর্মযজ্ঞের উদ্ধোধন করা হবে। এরপর শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় সারাবছর বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যদিয়ে আমরা তাঁকে স্মরণ করতে পারবো।
১৯১৯ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী ও নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরী। জাতীয় পর্যায়ে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নৃত্যচর্চায় বিশেষ অবদান রেখে গেছেন তিনি। তাঁর নৃত্যনাট্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নাচের সঙ্গে অভিনয় যোগ করে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য তুলে ধরা। তাঁর নৃত্যনাট্যের বিষয়বস্তু ছিল বিচিত্র ধরণের এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনাসম্পন্ন। যেমন-হিন্দু-মুসলিম পুরাণ কাহিনী ও রূপকথা, লোককাহিনী, ঐতিহাসিক চরিত্র, সামাজিক সমস্যা, সমকালীন ঘটনা, যুদ্ধ, দূর্ভিক্ষ প্রভৃতি।
১৯৩৪ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি প্রায় ৭০টি নৃত্যনাট্য রচনা এবং সফলভাবে পরিবেশন করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নৃত্যনাট্য হচ্ছে- অভিমন্যু, ইন্দ্রসভা, সাপুড়ে, সুধন্বা, কবি ও বসন্ত, মরুসঙ্গীত, ফসল উৎসব, তিন ভবঘুরে, জীবন ও মৃত্যু, শিব ও দেবদাসী, অজন্তা জাগরণ, অর্জুন, কালবৈশাখী, দি রেইনবো ফেয়ারিজ, হাফিজের স্বপ্ন, ইরানের পান্থশালায়, সোহরাব ও রস্তুম, ক্ষুধিত পাষাণ, মহাবুভুক্ষা, নিষ্প্রদীপ, যেন ভুলে না যাই, প্রেরণা, বিদায় অভিশাপ, ক্রাইসিস, শৃঙ্খলের নিপীড়নে, দেশপ্রেমিক, ভারত ছাড়, আনারকলি, ননীচোর, চাঁদ সুলতানা, বীতংস, রাসলীলা প্রভৃতি।
১৯৫৪ সালের ১৭ মে কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়। নৃত্যশিল্পে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁর নামে ১৯৫৫ সালের ১৭ মে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় বুলবুল ললিতকলা একাডেমী।