শাহেদ নূর :
বাংলা গানের অন্যতম সুরস্রষ্টা প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় বুদ্ধিজীবি কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন তিনি। গত ২২ জানুয়ারি মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর আফতাব নগরে নিজ বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কিংবদন্তি এই শিল্পী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুর খবরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ শোকের ছায়া নেমে আসে সর্বত্র। এর আগে দীর্ঘদিন নিজ বাসায় একপ্রকার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ায় হুমকি আসে তাঁর উপর। এরপর থেকে নিরাপত্তার মধ্যে তাঁকে কাঁটাতে হয়েছে তাঁকে। এ সময় একা হয়ে পড়েন তিনি। শেষ সময়ে অনেকটাই অগোচরেই কাটিয়েছেন তিনি। একা একাই তাঁকে তাঁর অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে।
২০১৮ সালের মাঝামাঝি বুলবুলের হার্টে আটটি ব্লক ধরা পড়ে। তার শারীরিক অবস্থার কথা জানতে পেরে চিকিৎসার দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হলেও তখন তিনি জানিয়েছেন তিনি দেশের বাইরে চিকিৎসা করাবেন না। সেসময় তিনি বলেছেন, ‘আমি ইচ্ছা করলেই দেশের বাইরে গিয়ে আমার হৃদ্রোগের চিকিৎসা করাতে পারতাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেই সুযোগও আমাকে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমার দেশপ্রেম আমাকে দেশ ত্যাগ করতে দেয়নি। আমি যেভাবে চেয়েছিলাম, সেভাবেই সবকিছু শুরু হয়েছিল। আমার বুকে ছিল জাতীয় পতাকা এবং পতাকার ওপর ছিল পবিত্র কোরআন।’ একজন মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল সবসময় হৃদয়ে ধারণ করতেন দেশমাতৃকাকে। তাঁর কথায় ও গানে ছিলো দেশপ্রেম।
অসংখ্য কালজয়ী গানের লেখক ও সুরকার তিনি। তিনি গায়ক হতে চাননি। চেয়েছেন গান রচনা ও সুর করতে। তাই তিনি দেশপ্রেমের গান রচনা ও সুর করেছেন সারাজীবন। গণমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, যুদ্ধের দিনের কথা মনে হলেই চোখের সামনে ভেসে উঠত সেই রোমহর্ষক দিনগুলোর স্মৃতি, হত্যাযজ্ঞের দৃশ্য। যাঁদের হারিয়েছি, অনুভব করলাম তাঁদের জন্য কিছু করা দরকার। সেই থেকে টানা আট বছর আমি শুধু দেশের গান করেছি। অন্য গান করিনি।
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুর করা দেশাত্নবোধক কালজয়ী গান ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, ‘মাঝি নাও ছাইড়া দে ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে’, ‘সেই রেললাইনের ধারেসহ অসংখ্য রয়েছে।
এছাড়া তিনি সুর করেছেন, মাগো আর তোমাকে ঘুম পাড়ানি মাসি হতে দেব না, একতারা লাগে না আমার দোতারাও লাগে না, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, আমার বুকের মধ্যেখানে, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন, আমি তোমারি প্রেমও ভিখারি, ও আমার মন কান্দে, ও আমার প্রাণ কান্দে, পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমারই ছোঁয়াতে যেন পেয়েছি, আম্মাজান আম্মাজান, ঈশ্বর আল্লাহ বিধাতা জানেসহ অসংখ্য।
তিনি চলচ্চিত্রের জন্য সংগীত পরিচালনা করেছেন। বাংলা চলচ্চিত্রের অসংখ্য মানসম্মত গান উপহার দিয়েছেন, যা আজও শ্রোতামহলে বেশ জনপ্রিয়। ১৯৭৮ সালে ‘মেঘ বিজলি বাদল’ ছবিতে সংগীত পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। গানগুলোর মধ্যে রয়েছে, উত্তরে ভয়ঙ্কর জঙ্গল দক্ষিণে না যাওয়াই মঙ্গল, কোন ডালে পাখিরে তুই বাঁধবী আবার বাসা, একাত্তুরের মা জননী কোথায় তোমার মুক্তিসেনার দল, বিদ্যালয় মোদের বিদ্যালয় এখানে সভ্যতারই ফুল ফোটানো হয়, আমায় অনেক বড় ডিগ্রি দিছে, এই জগৎ সংসারে তুমি এমনই একজন, জীবন ফুরিয়ে যাবে ভালোবাসা ফুরাবে না জীবনেসহ অসংখ্য গান।
তিনি শিল্পের সবজায়গায় বিচরণ করেন। তিনি সুর করেছেন। করেছেন গীতরচনা। ছিলেন চলচ্চিত্র সঙ্গীত পরিচালক। এমনকি তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। সিনেমার নাম ছিলো গুরু ভাই। যেখানে নায়ক ছিলেন নিরব।
সে প্রসঙ্গে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে চিত্রনায়ক নিরব বলেন, ‘২০০৯ সালের ছবি গুরু ভাই আমার অভিনীত দ্বিতীয় ছবি। বুলবুল ভাই গুরু ভাই ছবির সবগুলো গান করেছিলেন। ছবি প্রযোজক সোহেল রানা ভাই কুয়েত প্রবাসী, পরিচালক এ কিউ খোকন চেয়েছিলেন বুলবুল অন্তত একবার অভিনয়ে আসুক। তাই তাকে নেওয়া হয়েছিল। ভাই জীবনে একবার সিনেমায় অভিনয় করেছেন। গাজীপুরের একটি শুটিং হাউজে আমাদের কাজ শুরু হয়েছিল। দুটো কটেজে আমরা ইউনিটের সবাই উঠেছিলাম। বুলবুল ভাইয়ের কটেজ ছিল পুরোপুরি আলাদা। তার কটেজে যাওয়ার জন্য প্রযোজক আমাকে বার বার বলতো। কিন্তু আমি মনে করতাম, আমি গিয়ে তার সঙ্গে কি বলবো? এত গুণী একজন মানুষের সঙ্গে কথা বলার সাহস ছিল না তখন। একবার সাহস নিয়ে গিয়ে কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতে গিয়েছিলাম। আর চেয়েছিলাম বলবো, আমি আপনার অনেক বড় ফ্যান। পাশে গেলে উনিই আমাকে আগে একেবারে নরম সুরে জিজ্ঞেস করেন, ‘নিরব কেমন আছো তুমি? বসো, তোমার সাথে কথা বলি।’ তার কথা বলার ধরনে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। আমরা কবিতা যেভাবে আবৃত্তি করি, উনি সেভাবেই কথা বলেন। তার কথার মধ্যেই ছন্দ থাকে। একশ শব্দে যদি একটা লাইন হয়, সেটার মধ্যে একটা ছন্দ আছে মনে হয়েছিল।
নিরব বলেন, ‘গুরু ভাই’ ছবিতে উনি ভালো অভিনয় করেছিলেন। তার চরিত্র ছিল মূলত নাটের গুরু। সারাক্ষণ ভায়োলিন বাজান, আর কলকাঠি নাড়েন। সংলাপ ছিল না খুব বেশি। তবে চরিত্রটা ছিল খুব রাশভারী। এছাড়া আমার ক্যারিয়ারে এখনও যে দুটো ছবির গানের কথা আমি সবাইকে বলতে পারি ‘ওগো চাঁদ’, ‘ঘুমাও ঘুমাও’ এই দুটো গানের পরিচালক বুলবুল ভাই।
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল সম্পর্কে সঙ্গীতশিল্পী এ্যান্ড্রু কিশোর স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, বুলবুলকে নিয়ে কী বলব! আসলে বলার মতো কিছু নেই। আমাদের শুধু শিল্পী আর সংগীত পরিচালকের সম্পর্ক ছিল না। আমরা ছিলাম বন্ধু। তা-ও পারিবারিক বন্ধু। ১৯৮০ সালের দিকে তার সঙ্গে পরিচয়, সম্পর্ক। তখন আমাদের যৌবনকাল। তারপর তো অনেক কিছু হয়েছে। আমাদের সংসার হয়েছে, সন্তান হয়েছে। সেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক শেষ দিন অবধি ছিল আমাদের।
সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, আমার সঙ্গে বুলবুলের পরিচয় হয় ১৯৭৮ সালের দিকে। ওই সময় বিভিন্ন স্টুডিওতে বা গানের আড্ডায় কথা হতো আমাদের। কবে কীভাবে পরিচয় হয়েছে, সেটা এখন আর মনে নেই। তবে এতটুকু মনে আছে, আমাদের কলবাগানের লেক সার্কাসের বাসায় বুলবুল প্রায়ই আসত। তখন আমাকে বলত, আপনার জন্য কিছু গান করেছি, একটু শুনতে হবে। কিন্তু শোনার সুযোগ সহজে মেলে না। এই করে অনেক দিন পার হয়ে গেল। একদিন সুযোগ মিলল। বুলবুলকে ডেকে শুনতে বসে গেলাম। বেশির ভাগই দেশের গান। দেশের গানও এমন হতে পারে! আমি অভিভূত হয়ে যাই। এরপর তার গানগুলো দিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনে একটা অনুষ্ঠান করলাম পরের বছর। অনুষ্ঠানটা ব্যাপক সাড়া ফেলে। তারপর নিয়মিতভাবে কয়েক বছরই তার গান দিয়ে টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করেছি। সবার একটা আগ্রহ থাকত অনুষ্ঠানটা নিয়ে।
তিনি বলেন, আমার আর বুলবুলের মধ্যে গান নিয়ে বোঝাপড়াটা হতো খুব ভালো। আমার প্রতি তার একটা বিশ্বাস ছিল। বুলবুলের ধারণা ছিল, ‘তার গানের কথা, সুর—সবই আমি ভালো বুঝতে পারি। আমাকে প্রায়ই বলত, আপনি গাইলে আমার কোনো চিন্তা থাকে না। যেভাবে চাই, সেভাবেই পাই।’ আর আমি দেখতাম, তার গানের সবচেয়ে বড় শক্তিটা হলো, গান চোখের সামনে দেখতে পারা। গানের প্রতিটি কথা আমি চোখের সামনে দেখতে পারতাম। তবে শুধু দেশের গানেই নয়, চলচ্চিত্রের গানেও ছিল তার সমান অংশগ্রহণ।
সঙ্গীত শিল্পী ফাহমিদা চৌধুরী বলেন, আমরা গতকাল দেশের সম্পদ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে হারিয়েছি। যিনি চেয়েছিলেন এমন জায়গায় তার কবর হোক, যেখান দিয়ে সব মানুষ আসা-যাওয়া করবে, তার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দোয়া করতে পারবে। ৬০ দশকের ইমেজকে ভাঙা অনেক কঠিন আজও। বুলবুল ভাই সেই ইমেজকে না ভেঙেও ভেঙেছেন অনেক কিছু, যা মানুষকে তার অভ্যস্ততা বা মগ্নতাকে এতটুকু আঘাত না করে বরং গ্রহণ করবার, হৃদয়ে দোলা দেবার মতো গান করে গেছেন। মন ভোলানো দেশের গান, আধুনিক গান, সিনেমার গানে নতুন করে জাগ্রত করতে পেরেছেন যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে রুচিশীল উপমায়।
তিনি বলেন, আত্মবিশ্বাসী বুলবুল ভাই সুরের ভেতর ডুবে যাওয়া মানুষ ছিলেন। তাই দেশের গানে গল্প এনেছিলেন, সিনেমার গানে সাধারণ জীবনবোধ এনে দিয়েছিলেন। রুচিশীল, সৃজনশীলতার প্রলেপে মানুষের খুব কাছের যে চেনা সুর বা সহজ কথার আন্তরিকতা, তাকে নতুন করে নতুন রূপ দেয়া কিন্তু সহজ কাজ নয়। কারণ, মানুষ চিরকালই অভ্যস্ততার পক্ষপাতিত্বে অভ্যস্ত। অথচ বুলবুল ভাই সেই কাজটি কত সহজে করে গেছেন। ভাবাই যায় না। তাই হয়তো দেখা গেছে গাড়ি-বাড়ির চিন্তার চেয়ে শিল্পসৃষ্টির চিন্তায় বেশি মগ্ন ছিলেন এই মানুষটি। এ জন্যই আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের করা গানগুলো আজও মানুষকে আকৃষ্ট করে। বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ কাজগুলোতে সেই ভালোবাসা বা টানটা কমে গেছে। তাই তো বুলবুল ভাইয়ের অনেক অভিমান বা আক্ষেপ ছিল! ভালো কিছু না হলে তো শ্রোতা ধরে রাখা কঠিন হবে। এই ভাবনা উতলা করতো বুলবুল ভাইকে। যেমন করে চলে গেছেন অকালে আরও অনেকে। কষ্টটা এখানেই একজন প্রকৃত শিল্পীর।
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৭১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এ সময় তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের ২ নাম্বার সেক্টরে মেজর আবু তাহের মোহাম্মদ হায়দারের অধীনে যুদ্ধ করেন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অপারেশন সার্চলাইটের পর বুলবুল ও তার বন্ধুরা মিলে পাকিস্তানিদের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনতাই করে ছোট একটি মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন করেন যাদের ঘাঁটি ছিল ঢাকার জিঞ্জিরায়। জুলাইয়ে বুলবুল ও তার বন্ধু সরোয়ার মিলে নিউ মার্কেটের ১ নাম্বার প্রবেশমুখের কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর লরিতে গ্রেনেড হামলা করেন। অগস্টে ভারতের আগরতলায় কিছুদিন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং ঢাকায় ফিরে ‘ওয়াই (ইয়াং) প্লাটুন’ নামে একটি গেরিলা দল গঠন করেন।
সে সময়ের কথা বর্ণনা করেছিলেন তিনি বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাতকারে। তিনি বলেছিলেন, ১৯৭১ সাল। রোজার মাসের ঘটনা। ১৫ বছর বয়সী কিশোর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কারাগারে বন্দী। সাতাশে রমজানের ইফতারের পর আমরা কয়েকজন বসেছিলাম। এমন সময় কারাগারের দরজা বেশ আওয়াজ করে খুলে গেল। দরজা খোলার সাথে সাথে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন অফিসার ভেতরে প্রবেশ করলেন। তিনি ছিলেন ক্যাপ্টেন আলী রেজা।
সে আমাদের বললো যে কাম আউটসাইড (বাইরে এসো) এবং লাইনআপ (সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াও)। লাইনআপ করার পরে তিনি আমাদের আঙ্গুল তুলেতুলে বললেন যে এ কয়জন একদিকে থাকো, এবং এই কয়জন আরেক দিকে থাকো। ৪৩ জন মুক্তিযোদ্ধাকে আলাদা করলো এবং আমরা চারজন আলাদা। আমার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন একজন ব্রিগেডিয়ার, নাম সাদ উল্লাহ।
ব্রিগেডিয়ার সাদ উল্লাহর কাছে জানতে চাইলাম, কেন তাদের আলাদা করা হচ্ছে? তখন সে আমাকে ডেকে নিয়ে মাথায় হাত বুলালো কিছুক্ষণ। বললো যে তোমরা তো সাতদিন পরে ধরা পড়েছিলে। ওদের মৃত্যুদণ্ড আজ কার্যকর করবো আর তোমাদেরটা কার্যকর করবো আর তিনদিন পর। সরাসরি বললো। আমি ওনাকে থ্যাংকস দিলাম। ঐ রাতটা আমি আমার জীবন থেকে কখনো ভুলতে পারবো না। অনেক হৃদয় বিদারক একটা বিষয়।
বুলবুল বলেন, প্রতি রাতে জেলখানা থেকে তাদের নিয়ে রাজাকার ক্যাম্পে অত্যাচার করা হতো। ওই রাতে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার পর আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল এবং তাঁর আরো কয়েকজন সহযোদ্ধা পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আমরা চারজন ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনতাই করেছি এবং ঐ অবস্থায় আমরা পালিয়ে গেছি।
২০১২ সালের আগস্টে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দন্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করেন। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ৯ মার্চ রাতে ঢাকার কুড়িল উড়ালসেতুর পাশ থেকে পুলিশ বুলবুলের ছোট ভাই আহমেদ মিরাজের লাশ উদ্ধার করে। তাঁর ভাইয়ের মৃত্যুর পর তিনি সরকারের কাছে তার নিরাপত্তা বৃদ্ধির আবেদন করেন এবং এটাও উল্লেখ করেন যে সাক্ষ্য দেওয়ার পর তিনি বেশ কিছু হত্যার হুমকি পেয়েছেন।
সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের জন্য আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল পেয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক, শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং রাষ্ট্রপতির পুরস্কার-সহ অসংখ্য পুরস্কার।
১৯৫৬ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতার নাম ওয়াফিজ আহমেদ ও মাতার নাম ইফাদ আরা নাজিমুন নেসা। ঢাকার আজিমপুরের ওয়েস্টটেন্ট উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন এবং শিক্ষাজীবনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
কিংবদন্তী শিল্পী সুরস্রষ্টা সব্যসাচী শিল্পী আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবলের প্রয়ানে কালচারাল ইয়ার্ড শোকাহত। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা।