নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশের পপ গুরু আজম খানের জন্মদিন আজ। ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর আজিমপুর কলোনির ১০ নম্বর সরকারি কোয়ার্টারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
অসংখ্য শিষ্য ও গুণমুগ্ধ শ্রোতার সঙ্গে কালচারাল ইয়ার্ড পরিবার এই কিংবদন্তির জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাচ্ছে।
আজম খান সত্তরের দশকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়ে এদেশে পপ সঙ্গীতের সূচনা করেন। সে সময় তাঁর সঙ্গে দেশের সঙ্গীতের এ নতুন ধারায় যুক্ত হন শিল্পী ফিরোজ সাঁই, ফকির আলমগীর, ফেরদৌস ওয়াহিদ, নাজমা জামানসহ সদ্যপ্রয়াত পিলু মমতাজের মতো সময়ের একঝাঁক তরুণ প্রতিভা। পপ গানের এই রাজাকে কেউ কেউ পপ গুরু বলে সম্বোধন করতেও পছন্দ করতেন।
আজম খানের বাবা মোহাম্মদ আফতাব উদ্দিন খান ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী। মা জোবেদা বেগম ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী। মায়ের মুখেই গান শুনতে শুনতেই গড়ে ওঠে গানের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক।
১৯৫৫ সালে আজিমপুরের ঢাকেশ্বরী স্কুলে ও ১৯৫৬ সালে কমলাপুরের প্রভেনশিয়াল স্কুলে ভর্তি আজম খান। এরপর ১৯৬৮ সালে সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭০ সালে টি অ্যান্ড টি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জীবনকে বাজি রেখে অংশ নিয়েছেন অসংখ্য গেরিলা যুদ্ধে। প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার মেলাঘরে। প্রশিক্ষণ শেষে দেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেন দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে। অস্ত্র হাতে প্রথম লড়াই করেন কুমিল্লার সালদাহে। এরপর ঢাকার ডেমরা, যাত্রাবাড়ী হয়ে লক্ষানদী, বালুনদী, গুলশান, ইসাপুর ও ক্যন্টনমেন্টের পাশ পর্যন্ত নানা স্থানে অংশ নিয়েছেন গেরিলা অপারেশনে।
মুক্তিযুদ্ধের পর পড়ালেখায় আর অগ্রসর হতে পারেননি। বড় ভাইদের গানের চর্চা দেখে ঝুঁকে পড়েন সঙ্গীতের মায়াজালে। বিভিন্ন এলাকার বন্ধুদের বাড়ির ছাদে বসে জমে উঠতো গানের আসর। হেমন্ত, শ্যামল মিত্র, মুখেশ, মুহাম্মদ রফি, কিশোর কুমারসহ দেশ-বিদেশের নানান শিল্পীর গানে মাতিয়ে রাখতেন আসর।
আজম খান সম্পর্কিত আরও খবর :
⇒ পপ গুরু আজম খান
১৯৭২ সালে নটরডেম কলেজের একটি অনুষ্ঠানে প্রথম মঞ্চে গান শোনান পপ গুরু আজম খান। তখনও এদেশে প্রচলিত হয়নি কনসার্ট নামের সঙ্গীতানুষ্ঠান। ১৯৭৩ সালের ১ এপ্রিল প্রথম কনার্ট হয় ওয়াপদা মিলনায়তনে। সেখানে এক মঞ্চে গান গেয়েছিলেন আজম খান, ফিরোজ সাঁই, ফেরদৌস ওয়াহিদ, ফকির আলমগির ও পিলু মমতাজ। সত্তর, আশি ও নব্বইয়ের দশকে বৈচিত্র্যময় কথার নানা পপ গান গেয়ে তারুণ্যের হৃদয়ে উন্মাতাল আনন্দের ঝড় তুলেছেন।
১৯৮২ সালে বের হয় তাঁর প্রথম ক্যাসেট ‘এক যুগ’। সব মিলিয়ে তাঁর অডিও ক্যাসেট ও সিডির সংখ্যা ১৭টি। এছাড়া বেশকিছু চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেছেন তিনি। তাঁর অগণিত জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, আলাল ও দুলাল, ওরে সালেকা ওরে মালেকা, অভিমানী, আমি যারে চাইরে, হাইকোর্টের মাজারে, এত সুন্দর দুনিয়ায়, জীবনে কিছু পাব নারে, পাঁপড়ি কেন বুঝে না, চার কলেমা সাক্ষী দিবে এবং ও চাঁদ সুন্দর রূপ তোমার ইত্যাদি।
গানের পাশাপাশি বেশকিছু চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপন চিত্রে কাজ করেছেন এই পপ গুরু। ১৯৮৬ সালে হীরামন চলচ্চিত্রে কালা বাউলের চরিত্রে এবং ২০০৩ সালে ‘গডফাদার’ সিনেমায় ভিলেনের চরিত্রে তিনি অভিনয় করেন।
১৯৮১ সালের ১৪ই জানুয়ারি তিনি সাহেদা বেগমকে বিয়ে করেন। তাদের এক ছেলে এবং দুই মেয়ে। ইমা খান, হৃদয় খান ও অরণী খান।
২০১০ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা নামক মুখগহ্বরের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন আজম খান। ২০১১ সালের ২২ মে হঠাৎ বাম হাতে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলে তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৭ মে গুরুতর অসুস্থ হলে তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়। এরপর স্কয়ার থেকে ১ জুন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় তাঁকে। ৫ জুন রবিবার সকাল ১০ টা ২০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তি এ শিল্পী।
২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সঙ্গীতে বিশেষ অবদানের জন্য পপ গুরু আজম খানকে মরনোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। যদিও আরও অনেক আগেই তাঁকে একুশে পদক দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলো ভক্তরা।