শান্তা আক্তার :
বড় ও ছোটপর্দার জনপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সারোয়ার ফারুকীর দেশে ও দেশের বাইরে রয়েছে এক বিশাল ভক্তকূল। রয়েছে অনেক অনুসারী, সহযোগি। এদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন তিনি ভাই ব্রাদার গ্রুপ। ভাই ব্রাদার গ্রুপের ফারুকীর সহকারী কিছু নির্মাতা ছোটপর্দায় নিয়মিত কাজ করছেন। ফারুকীর সহকারী পরিচালক টেলিভিশন নাটকের নির্মাতা মোস্তফা কামাল রাজ বড় পর্দার জন্য একটি নির্মাণ করেছেন। যার নাম ‘যদি একদিন’। দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে তা দেখানো হচ্ছে। যাকে তিনি ও তার শুভানুধ্যায়ীরা বলছেন সিনেমা। এই ছবি সম্পর্কে সাধারণ দর্শকদের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছি।
শুক্রবার প্রথম প্রহরেই সকাল ১০টার শো মধুমিতায় গিয়ে দেখি। হাতে গোনা কয়েকজন দর্শক ছিলো। হয়তো ছুটির দিনের সকাল বলে অনেকেই আসেনি। বিকেলে বা সন্ধ্যায় ভিড় বাড়বে এই স্বান্তনা নিয়ে ছবিটি দেখতে বসি। ছবি দেখতে গিয়ে যা হলো মনে হলো শুক্রবারে দুপুরের পর বাংলাদেশের টেলিভিশনগুলোতে রিমোর্ট চালিয়ে যে সব বড় নাটক বা টেলিফিল্ম যেমন দেখি, সেরকম কিছু একটা দেখছি মনে হলো।
যাই হোক ছবিটির শুরু থেকে দেখি হলে থাকা দর্শক কিছুক্ষণ পর হাসছে। হাসুক ভালো কথা। ছবি দেখলে না হাসলে আর ছবি কেন। কিন্তু দু:খের বিষয় হলো কোনো হাসির সিনে কেউ হাসছেনা। যখন তাহসান তার শত্রুভাবাপন্ন বন্ধু তাসকিনের সঙ্গে দেখা করতে গেলো। বন্ধু তাসকিন যখন অনেকদিন পর বন্ধুকে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে কান্নার এক্সপ্রেশনে। কিংবা বন্ধু তাসকিনের বিয়ের আসরে গিয়ে যখন সেক্রিফাইস ও কষ্টের কথা বলছে তাহসান সে সময় পেক্ষাগৃহে হাসির রোল। বিশেষ করে যা বোঝা যাচ্ছিল তাসকিনের এক্সপ্রেশনই মূলত সবার হাসির কারণ। কান্নার এক্সপ্রেশন দিতে গিয়ে হাসির পাত্র হতে হলো নতুন এই অভিনেতাকে।
যেখানে একটু হাসির উপকরণ পেলেই বাংলা ছবির দর্শক হেসে কুটিকুটি হয় সেখানে অফিসের দুই কর্মচারি চরিত্রে নাটকের দু জন খুব ভালো মানের অভিনেতা শত চেষ্টা করে দর্শকদের একটুও হাসাতে পারলো না। তাদের ভাঁড়ামো দেখে বিরক্তিরই উদ্রেক দেখা গেছে হলে। এর কারণ আমার কাছে মনে হয়েছে অবজ্ঞা করা সংলাপ।
ছবির নামে দেখা কন্টেন্টের অভাবে যেন তেন করে বানানো কোন নাটক যেমন টিভিতে দেখা যায়, তেমন একটা কিছু দেখলাম পুরোটা সময় ধরে। এই তথাকথিত চলচ্চিত্র দেখে আসলে কোন রিভিউ দেওয়ার নেই। চলচ্চিত্র ভাষাজ্ঞান যার নেই, চলচ্চিত্রের ট্রিটমেন্ট, শর্টডিভিশন, আর্ট, ক্লাইমেক্স কোন কিছুরই যে ধার ধারেনি কি বলার আছে। শুধু বলার আছে সর্বাঙ্গেই ব্যাথা ঔষধ দিবো কথা।
বাংলা নাটকগুলো যেখানে সংলাপের কারণে এত সমৃদ্ধ। সেখানে এই তথাকথিত চলচ্চিত্রের সংলাপ প্রক্ষেপনের জায়গাটা এতটা নাজুক! সুযোগ তেমন না থাকলেও শ্রাবন্তী ও শিশুশিল্পী আফরীন শিখার অভিনয় ভালো ছিল। মুল চরিত্রের তাহসান রহমান খানকে চলচ্চিত্র উপযোগি এখনও মনে হচ্ছে না।
শুধু একটা কথাই মনে হলো শাহবাগে, মগবাজারে কিছু তরুণ স্বপ্নবাজ চলচ্চিত্র নির্মাতা বসে হতাশা চর্চা করে একটি ছবি বানাবে বলে। কিন্তু তাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে না কোনো প্রযোজক। দ্বারে দ্বারে ঘুরে প্রযোজকদের টিকিটারও খোঁজ পায়না তারা। তবে এ সব টেলিফিল্ম বানানোর জন্য ঠিকই সিনেমার বাজেট দেয় প্রযোজকরা!
একজন চলচ্চিত্র শিক্ষার্থীর মতামত জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘যদি একদিন’ একটি গল্প বলেছে। যে ধরণের গল্প টেলিভিশনের ২০ মিনিটের নাটকে বলা যায়। তবে সেখানেও আরও ভালো সংলাপের প্রয়োজন। না হলে এটি নাটকের মানও অর্জন করতে পারবেনা। সেখানে এটি চলচ্চিত্র বলে হলে চালানোর মানে হয়না। চলচ্চিত্রের একটি ভাষা আছে। সেই ভাষাটা আগে তাকে শিখতে হবে।
চলচ্চিত্র বোদ্ধা তো নয়ই, শিক্ষিত দর্শকও নন এমন একজন দর্শক হকার শ্রমিক খায়ের। হল থেকে বের হয়ে তিনি চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছে। পাশের চায়ের দোকানদার তার বন্ধু। সে বলছে, ‘কিরে কি ছবি দেখলি। খায়ের: ‘আরে কিয়ের ছবি? টেলিফিল্ম দেখাইছে। এবার ছবি পায় নাই বোধ হয়’।
পরিশেষে জনৈক দর্শকের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শেষ করছি, টেলিভিশনে নাটক বানাইয়া ছবি কেন বানাতে আসছে। ছবি বানানো শিখতে চাইলে গুরুদের কাছে সহকারী হিসেবে কাজ করে ছবি বানানো শিখুক। এরপর ছবি বানাক। হলে এসে পয়সা খরচ করে টেলিফিল্ম দেখবো কেন?