নিজস্ব প্রতিবেদক :
ভুবন সোম খ্যাত বাঙালি চলচ্চিত্র নির্মাতা মৃণাল সেন ৯৫ বছরে পরপারে চলে গেছেন ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। কিন্তু তাঁর স্মৃতি অম্লান রয়ে গেছে চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষের হৃদয়ে। মৃণাল সেনের শেষ জন্মদিনে আমরা প্রত্যাশা করে লিখেছিলাম মৃণাল সেন শত বছর পার করুন। কিন্তু না তিনি এর আগেই চলে গেলেন।
মৃণাল সেনের জন্মদিনে কালচারাল ইয়ার্ড পরিবার তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে।
ভারতীয় চলচ্চিত্রের তিন দিকপালের একজন মৃণাল সেন। বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিত রায় ও ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গেই উচ্চারিত হয় মৃণাল সেনের নাম। মৃণাল সেন ২৮টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও ৪টি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ৬টি চলচ্চিত্র বিষয়ক মৌলিক গ্রন্থ লিখেছেন। তাঁর লেখা বই ও নির্মিত সিনেমা নিয়ে দেশ বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ানো হয়।
১৯২৩ সালের ১৪ মে পূর্ব বাংলার ফরিদপুরে জন্ম নেন মৃণাল সেন। সেখান থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। দেশভাগের পর পরিবারসহ চলে যান পশ্চিম বাংলায়। কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিষয়ে পড়াশোনা করেন।
জীবিকার তাগিদে কখনো সাংবাদিকতা, কখনো ঔষধ বিপণনকারী কিংবা চলচ্চিত্রের শব্দ কলা কুশলী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু তাঁর একটিই সাধনা সিনেমা নির্মাণ করবেন। আর এই সাধনা এক সময় তাঁকে বিশ্বখ্যাত সিনেমা নির্মাতা হিসেবে এনে দেয় সাফল্য।
১৯৫৫ সালে মৃণাল সেনের প্রথম ছবি ‘রাতভোর’ মুক্তি পায়। এটি তেমন সাফল্য না পেলেও তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘নীল আকাশের নীচে’ দিয়ে পরিচিতি পান তিনি। তাঁর তৃতীয় ছবি ‘বাইশে শ্রাবণ’ এর মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হয়ে উঠেন।
চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেন সম্পর্কিত আরও খবর
⇒ কিংবদন্তী চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেন আর নেই
এরপর তিনি নির্মাণ করেন ‘ভুবন সোম’, তাঁর কলকাতা ট্রিলোজি ইন্টারভিউ, ক্যালকাটা ৭১ এবং পদাতিক, এক দিন প্রতিদিন, খারিজ, আকালের সন্ধানে, অন্তরীণ, আমার ভুবনসহ অসংখ্য ছবি। ১৯৮৩ সালের কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জুরি পুরস্কার পায় তাঁর খারিজ ছবিটি। এছাড়া তাঁর নির্মিত ‘আকালের সন্ধানে’ ১৯৮১ সালের বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জুরি পুরস্কার হিসাবে রুপোর ভালুক অর্জন করেন। এই চলচ্চিত্রটি তৈরি হয়েছিলো ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের দুর্ভিক্ষের উপর একটি গ্রামের পটভূমিতে। যা সারাবিশ্বে এক আলোড়ন তৈরি করে।
মৃণাল সেন বাংলা ভাষা ছাড়াও হিন্দি, ওড়িয়া ও তেলেগু ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। ১৯৬৬ সালে তিনি ওড়িয়া ভাষায় নির্মাণ করেন মাটির মনীষ। হিন্দি ভাষায় নির্মাণ করে ‘ভুবন সোম’। ১৯৭৬ সালে নির্মাণ করে ‘মৃগয়া’। এ সিনেমায় মিঠুন চক্রবর্তীর অভিষেক ঘটে। ১৯৭৭ সালে প্রেম চন্দের গল্প অবলম্বনে তেলেগু ভাষায় নির্মাণ করেন `ওকা উরি কথা’। ১৯৮৫ সালে নির্মাণ করেন ‘জেনেসিস’। যা হিন্দি, ফরাসি ও ইংরেজি তিনটি ভাষায় তৈরি হয়।
তিনি ইন্টারন্যাশন্যাল ফেডারেশন অফ দি ফিল্ম সোসাইটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৮১ সালে ভারত সরকার দ্বারা পদ্মভূষণ পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৫ সালে পান দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার। ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ অবধি ভারতীয় সংসদের সাম্মানিক সদস্যপদ লাভ করেন। ফরাসি সরকার তাঁকে কমান্ডার অফ দি অর্ডার অফ আর্টস অ্যান্ড লেটারস সম্মানে সম্মানিত করেন। এই সম্মান ফ্রান্সের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান। ২০০০ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁকে অর্ডার অফ ফ্রেন্ডশিপ সম্মানে ভূষিত করেন। দেশে বিদেশে অনেক চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন এই কিংবদন্তী চলচ্চিত্র নির্মাতা।
গত বছর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর কলকাতার ভবানীপুরে নিজ বাসভবনে তিনি মারা যান।