নিজস্ব প্রতিবেদক :
চলচ্চিত্র বিষয়ে সরকারকে বিভিন্ন পরামর্শ এবং চলচ্চিত্রকে উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করার জন্য গঠিত হয়েছে জাতীয় পরামর্শক কমিটি। ২ জুলাই তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ২৪ জন সদস্যের তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে তথ্যমন্ত্রী, তথ্য প্রতিমন্ত্রী, তথ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয় সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সচিব, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিব, আইন ও বিচার বিভাগ সচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ সচিবসহ আমলারা রয়েছেন। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যাক্তি থাকলেও তা অপ্রতুল। এ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা ও বোদ্ধাদের অনেকেই সমালোচনায় মুখর। এ নিয়ে ইতিবাচক আলোচনাও হচ্ছে।
এ কমিটিতে আরও রয়েছেন এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী, ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক। যে পদগুলোতে দীর্ঘদিন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা বলে আসছেন চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যাক্তিদের এ পদে আনা হোক।
এছাড়া জাতীয় পরামর্শক কমিটিতে বাকি যারা রয়েছেন তারা হলেন- চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআই এর এক জন প্রতিনিধি, চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির একজন প্রতিনিধি, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দীন নওশাদ, ড. ইনামুল হক, চলচ্চিত্র সংসদের একজন প্রতিনিধি, দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম, অভিনেত্রী সূবর্ণা মুস্তাফা, সারাহ বেগম কবরী, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও চলচ্চিত্র)/ যুগ্ম সচিব (চলচ্চিত্র), তথ্য মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনের তথ্যানুযায়ী এই কমিটি শিগগিরই কাজ শুরু করবে। আর তাদের কাজ হবে-
(ক) চলচ্চিত্র নীতিমালার আলোকে চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে করণীয় বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ ও সুপারিশ প্রদান।
(খ) চলচ্চিত্র নীতিমালায় বর্ণিত বিভিন্ন বিষয় বাস্তবায়নে করণীয় সম্পর্কে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ প্রদান।
(গ) চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান নীতি, আইন ও বিধিমালা পর্যালোচনা করে এসব আইন, নীতি ও বিধির পরিবর্তন, সংশোধন ও পরিমার্জনের প্রয়োজন হলে বা নতুন অইন, নীতি, বিধির প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে সুপারিশ প্রদান।
(ঘ) দেশে ও বিদেশে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যাবলি অনুসরণ ও পর্যবেক্ষণ করে সেসব কার্যক্রমে অভিজ্ঞতার আলোকে জাতীয় চলচ্চিত্রের উন্নয়নে গৃহীতব্য ব্যবস্থা সম্পর্কে সুপারিশ প্রদান।
(ঙ) চলচ্চিত্র নীতিমালার কোনো বিষয়ে সংযোজন, সংশোধন ও পরিমার্জনের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে সুপারিশ প্রদান।
(চ) কমিটি বছরে নূন্যতম পক্ষে দুটি সভায় মিলিত হবেন।
এদিকে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন থেকে চলচ্চিত্র শিল্প থেকে আমলাদের আধিপত্য শিথীল করার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু সেন্সর বোর্ড থেকে শুরু করে সসবক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় আমলাদের দিয়ে চলচ্চিত্রে হস্তক্ষেপ হচ্ছে। এমনকি এফডিসি, ফিল্ম আর্কাইভ ও চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের প্রধানের দায়িত্ব চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কাউকে করার দাবি করা হচ্ছিল। তা তো হয়নি বরং এর উপর আরেকটি পরামর্শ কমিটি করে সেখানে আমলা দিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। যেখানে চলচ্চিত্রের মানুষের সংখ্যা খুবই কম।
এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা খন্দকার সুমন। তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, এদেশে বসবাস করে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে সেন্সর ছাড়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব গুলোতেও পাঠাতে পারবেন না। সে খবর নিশ্চয়ই জানেন। এবার আমলাদের নিয়ে চলচ্চিত্র বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি করা হয়েছে। তাদের ছয়টি কার্য তালিকার মধ্যে চতুর্থটি হচ্ছে- (ঘ) দেশে ও বিদেশে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যাবলি অনুসরণ ও পর্যবেক্ষণ করে সেসব কার্যক্রমে অভিজ্ঞতার আলোকে জাতীয় চলচ্চিত্রের উন্নয়নে গৃহীতব্য ব্যবস্থা সম্পর্কে সুপারিশ প্রদান। এরপরও আপনারা চুপ থাকবেন প্রিয় নির্মাতা?
চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক, ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক বেলায়াত হোসেন মামুন তার ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে এ জাতীয় কমিটি নিয়ে মন্তব্য করে বলেন, পরামর্শ কারা দেবেন? দুই একজন ছাড়া বাকিরা কি এমন পরামর্শ দেবেন তা ধারণা করা যাচ্ছে..। ২৪ জনের মধ্যে আমলাদের সংখ্যা ইন্টারেস্টিং…।
এভাবেই অন্য চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরাও উস্মা প্রকাশ করছেন এবং চলচ্চিত্র শিল্পকে রক্ষায় আমলা নির্ভরতা কমানোর দাবি করছেন।