নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলা চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল তারকা হয়ে জোসনার আলো বিলিয়েছেন মিষ্টি হাসির নায়িকা পূর্ণিমা। সিনেমার জ্বলজ্বলে তারা বাংলা নাটকেও জ্বলেছেন, দিয়েছেন স্নিগ্ধ আলো। ৩৯তম বসন্তে এসে পৌঁছেছেন জনপ্রিয় এই চিত্রনায়িকা ও প্রতিভাধর অভিনয়শিল্পী। সেই কিশোরী স্নিগ্ধ সুন্দরী নায়িকা পরিণত বয়সেও সমুজ্জ্বল। নিজের সৌন্দর্য, মোহনীয় ব্যক্তিত্ব আর অভিনয়গুন এখনও মুগ্ধতার আবেশ ছড়ায় তরুণ-তরুণী থেকে পরিণত বয়সের দর্শকদের মাঝে।
টিভি নাটকের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে এ বয়সেও মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে যাচ্ছেন পূর্ণিমা। ৩৮ বছর পেরিয়ে ৩৯ বছরে পা রাখলেন তিনি। কালচারাল ইয়ার্ড পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
১৯৮১ সালের ১১ জুলাই চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম দিলারা হানিফ ও ডাক নাম রিতা। চলচ্চিত্রে এসে তিনি হন পূর্ণিমা। নায়িকা শাবনূর ও মৌসুমির পর সুস্থ ধারার সিনেমায় নিজেকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন তিনি। তিনি তার ক্যারিয়ারে শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন।
জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘এ জীবন তোমার আমার’ ছবির মাধ্যমে ১৯৯৭ সালে কিশোরী পূর্ণিমা চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। ২০১০ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘ওরা আমাকে ভাল হতে দিল না’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
২০০৩ সালে তার সব থেকে সফল ছবি মতিউর রহমান পানু পরিচালিত ‘মনের মাঝে তুমি’ মুক্তি পায়। বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবিটি তার ক্যারিয়ারের একটি ব্যবসাসফল ছবি। ২০০৪ সালে রাবেয়া খাতুনের উপন্যাস ‘মেঘের পরে মেঘ’ অবলম্বনে চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি ‘মেঘের পরে মেঘ’ ছবিতে অভিনয় করে প্রশংসা পান। ২০০৬ সালে বিশ্বকবির ‘শুভাসিনী’ গল্প অবলম্বনে নির্মিত ‘সুভা’ চলচ্চিত্রে তিনি নাম ভূমিকায় একজন বাক প্রতিবন্ধী চরিত্রে অভিনয় করে নিজের অভিনয় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
ওই বছরই তার অন্যতম বাণিজ্যিক সফল ছবি ‘হৃদয়ের কথা’ মুক্তি পায় এবং এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তারকা জরিপে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী (নারী) বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করেন তিনি।
এছাড়া ২০০৮ সালে ‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এর তারকা জরিপ ও সমালোচক শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী (নারী) বিভাগে মনোনীত হন।
এছাড়া তিনি ২০১১ সালে চিত্রনায়ক আলমগীর প্রযোজিত শাহ আলম কিরণ পরিচালিত ‘মাটির ঠিকানা’, চিত্রনায়ক সোহেল রানা প্রযোজিত আহমেদ নাসির পরিচালিত ‘মায়ের জন্য পাগল’, ২০১৪ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু’, ২০১৬ সালে ফিরে আসেন প্রতিবন্ধীদের নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘বন্ধ দরজা’সহ শতাধিক ছবিতে দাপুটের সঙ্গে অভিনয় করেন।
চিত্রনায়ক রিয়াজের সঙ্গে জুটি বেধে অভিনয় করেন তিনি বেশিরভাগ ছবিতে। সালমান-শাবনুর জুটির মতো রিয়াজ-পূর্ণিমা জুটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এক সময় অশ্লীলতা বাংলা ছবিতে ভর করলে তিনি সিনেমা থেকে কিছুটা দূরে সরে যান। এরপর টিভি নাটকে নিয়মিত হন তিনি।
২০১১ সালে বিশ্বকবির প্রয়ান দিবস উপলক্ষে তাঁর ছোট গল্প ল্যাবরেটরি অবলম্বনে মাহবুবা ইসলাম সুমির পরিচালনায় ‘ল্যাবরেটরি’ নাটকে সেজুতি চরিত্রে অভিনয় করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে- আরিফ খান পরিচালিত ওই খানে যেও নাকো তুমি, শামীমা আক্তার বেবী পরিচালিত উল্টোধনুক, মাহবুবা ইসলাম সুমি পরিচালিত এখনও ভালোবাসি, এসএ হক অলিকের পরিচালনায় নীলিমার প্রান্তে দাঁড়িয়ে ও অমানিশা, তুহিন হোসেন পরিচালিত প্রেম অথবা দুঃস্বপ্নের রাত, সেজান মাহমুদের লাভ অ্যান্ড কোং। এছাড়া তিনি এস এ হক অলিক পরিচালিত ‘ফিরে যাওয়া হলো না’ টেলিফিল্মসহ বেশ কিছু টেলিছবিতে অভিনয় করেন।
টেলিভিশনে তিনি বেশ কিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেছেন। ২০১৮ সাল থেকে তারকাদের নিয়ে আলাপচারিতা অনুষ্ঠান ‘এবং পূর্ণিমা’ উপস্থাপনা করছেন তিনি।
পারিবারিকভাবে আহমেদ জামাল ফাহাদকে বিয়ে করেছেন তিনি। তাদের ৫ বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে। নাম আরশিয়া উমাইজা।