নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঢালিউড সিনেমার মহানায়ক বুলবুল আহমেদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১০ সালের ১৫ জুলাই তিনি পরপারে পাড়ি জমান। বাংলা চলচ্চিত্রের গুনী এই অভিনেতাকে স্মরণ করছে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট মানুষরা। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি আয়োজন করেছে বুলবুল আহমেদ স্মরণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। এছাড়া বুলবুল আহমেদ ফাউন্ডেশন এবার বর্ষীয়ান অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানকে স্মৃতি সম্মাননা দিয়েছে।
বুলবুল আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বুলবুল স্মরণের পাশাপাশি ১৫ শিল্পী স্মরণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। রহমান, দিলদার, রানী সরকার, ফিরোজ ইফতেখার, আব্দুল আলী লালু, রাতিন, আব্দুল করিম খান, আমির হোসেন বাবু, আমিনূল হক, নূর মির্জা, শামসুদ্দিন টগর, সৈয়দ আকতার আলী, মনির হোসেন বুলেট ও পাপিয়া সেলিমকে স্মরণ করা হয় এ আয়োজনে।
এ বিষয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেন, ‘যাদের কাজ দেখে আমরা চলচ্চিত্রে এসেছি, তাদের মধ্যে জুলাই মাসে আমরা হারিয়েছি গুণী ১৫ জন শিল্পীকে। তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে আমাদের এ আয়োজন। আজ বাদ আসর এটি হবে শিল্পী সমিতির স্টাডিরুমে। পাশাপাশি সকাল থেকে কোরআন খতম চলছে।’
এদিকে রবিবার বুলবুল আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বুলবুল আহমেদ ফাউন্ডেশন হাসপাতালে অসুস্থ অবস্থায় থাকা বর্ষীয়ান অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানকে স্মৃতি সম্মাননা দেয়। ফাউন্ডেশনের পক্ষে বুলবুল আহমেদের সহধর্মিণী ডেইজি আহমেদ ও কন্যা তাহসিন ফারজানা তিলোত্তমা এ টি এম শামসুজ্জামানের হাতে পদক তুলে দেন। এ সময় সেখানে এ টি এম শামসুজ্জামানের সহধর্মিণী রুনী জামান, মেয়ে, নাতনিসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সত্তর ও আশির দশকে তিনি আলমগীর কবিরের ধীরে বহে মেঘনা, সূর্য কন্য, সীমানা পেরিয়ে, রূপালী সৈকতে, মোহনা ও মহানায়ক ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠেন বুলবুল আহমেদ। তিনি চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত দেবদাস চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বিপুল জনপ্রিয়তা পান। বুলবুল আহমেদ চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
১৯৪১ সালে পুরান ঢাকার আগামসিহ লেনে জন্মগ্রহণ করেন বুলবুল আহমেদ। তার আসল নাম তাবারক আহমেদ। তার বাবা-মা তাকে আদর করে বুলবুল বলে ডাকতেন। পিতা অভিনেতা-নাট্যকার খলিল আহমেদ ছিলেন পাকিস্তান আমলের অর্থ বিভাগের ডেপুটি সেক্রেটারি। বুলবুল আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকার কলেজিয়েট স্কুল, নটর ডেম কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে কিছুদিন সিলেট এমসি কলেজেও পড়াশোনা করেছেন তিনি।
বুলবুল আহমেদ ১৯৬৪ সালে প্রথম টিভি নাটক আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘বরফ গলা নদী’-তে অভিনয় করেন। এরপর নিয়মিতভাবে টিভি নাটকে কাজ করেন তিনি। টিভিতে বুলবুল আহমেদ অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটক মালঞ্চ, ইডিয়েট, মাল্যদান, বড়দিদি, আরেক ফাল্গুন, শেষ বিকেলের মেয়ে। এর মধ্যে ইডিয়েট নাটকে বুলবুল আহমেদের অভিনয় বেশ প্রশংসিত হয়। তিনি ছিলেন একাধারে মঞ্চ, বেতার, টিভি, চলচ্চিত্র অভিনেতা, আবৃত্তিকার এবং অনুষ্ঠান ঘোষক। তবে কলেজজীবন থেকেই তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
ব্যাংকে ১০ বছর চাকরি করার পর তিনি রূপালি জগতে পর্দায় পা রাখেন। ১৯৭২ সালে আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমামের অনুপ্রেরণায় সিনেমায় কাজ শুরু করেন বুলবুল আহমেদ। ১৯৭৩ আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমামের (ইউসুফ জহির) মুক্তি পাওয়া ছবি ইয়ে করে বিয়ের মাধ্যমে প্রথম বড় পর্দার দর্শকদের সামনে নায়ক হিসেবে আবির্ভাব ঘটে তাঁর। বছরখানেক বিরতির পর আবার বড় পর্দায় আসেন আব্দুল্লাহ আল মামুনের অঙ্গীকার ছবির মাধ্যমে।
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন বুলবুল আহমেদ। তাঁর পরিচালিত উল্লেখযোগ্য ছবি হচ্ছে ওয়াদা, মহানায়ক, ভালো মানুষ, রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্ত, আকর্ষণ, গরম হাওয়া, কত যে আপন প্রভৃতি। এর মধ্যে শেষের চারটি ছবি প্রযোজনার পাশাপাশি পরিচালনাও করেন বুলবুল আহমেদ। ৪৪ বছরের মিডিয়া জীবনে বুলবুল আহমেদ প্রায় ৩০০ নাটক এবং দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন।
বুলবুল আহমেদের স্ত্রী ডেইজি আহমেদ ও তাদের তিন সন্তান মেয়ে ঐন্দ্রিলা ও তিলোত্তমা এবং ছেলে শুভ।