ডেস্ক রিপোর্ট :
বাংলা সিনেমার কিংবদন্তী পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের সহকারি হিসেবে কাজ করেছেন। আশির দশক থেকে টালিগঞ্জের নামকরা পরিচালকদের সঙ্গে সহকারি পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। এরপর নিজেই পরিচালনা করেন সিনেমা। সিনেমায় চরিত্র বিনির্মাণ করা এই কারিগর জীবনমঞ্চে টিকে থাকতে বেছে নিয়েছেন দারোয়ানের চরিত্র। টালিগঞ্জের এই চিত্রপরিচালক সুব্রতরঞ্জন দত্ত এখন কলকাতার একটি আবাসনের গেটের দারোয়ানের চাকরি করেন।
জনজাতিদের জীবনযাত্রা নিয়ে নির্মাণ করেছেন ‘প্রবাহিণী’ নামে একটি চলচ্চিত্র। ২০১৬ সালে ছবিটি নন্দনে মুক্তি পায়। এরপর টোকাইদের জীবন নিয়ে নির্মাণ করেছেন ‘কলি’ ছবিটি। ছবিটি এখনও মুক্তি পায়নি। ৬২ বছর বয়সী সুব্রতরঞ্জন দত্ত ঋত্বিক ঘটকের ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ চলচ্চিত্রে শিক্ষানবীশ হিসেবে কাজ শুরু করেন। বাংলা সিনেমার পাশাপাশি মুম্বাইয়ের শশধর মুখোপাধ্যায়ের প্রোডাকশন হাউসেও কাজ করেছেন তিনি। তা সত্ত্বেও এখন হাতে কাজ নেই। তাই শুধু জীবন ধারণের জন্য মাত্র সাড়ে ছয় হাজার টাকায় নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি নিয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে সুব্রতরঞ্জন বলেন, ‘সময় পেলেই নতুন চিত্রনাট্য তৈরির চেষ্টা করি এখনও। তবে এই চাকরি করে সময় বের করাটা কঠিন। স্ত্রী, মেয়েকে নিয়ে সংসার। চলতে তো হবেই। বেশ কয়েক বছর বসে ছিলাম। অবশেষে এই কাজেই ঢুকলাম। আমি মনে করি, কোনও কাজই ছোট নয়।’ তবে হাল ছাড়েননি তিনি। তার কথায়, ‘জীবন সিনেমার চিত্রনাট্যের মতোই গতিশীল। ভালো কাজের সুযোগ অবশ্যই পাব। সেজন্য চেষ্টাতো চালাতেই হবে। সিনেমারই তো কথা, দ্য শো মাস্ট গো অন।’
কলকাতার ভিআইপি রোডের একটি আবাসনে ১২ ঘণ্টার নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেই সময় চলে যায় তার। তারপরও নতুন কাজের আশায় সারারাত ডিউটির পর সকালে যান টালিপাড়ায়। ফিরে এসে আবারও আবাসনের গেটের সামনে রাতে পাহারার কাজে যোগ দেন পলতার বাসিন্দা সুব্রতবাবু।
ঋত্বিক ঘটক প্রসঙ্গে সুব্রতরঞ্জন বলেন, ‘তখন কেবল উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছি। ঋত্বিকবাবুর যুক্তি তক্কো আর গপ্পো সিনেমার সেটে দাঁড়িয়ে তার কাজ দেখতাম আর শিখতাম।’ তিনি জানান, তারপরে চিত্রপরিচালক শঙ্কর ভট্টাচার্যের সঙ্গে সহকারি পরিচালকের কাজের সুযোগ পান। নব্বই দশকে মুম্বাই থেকে কলকাতায় ফেরার পরে সহকারি পরিচালক থেকে পরিচালক হতেই কেটে যায় দেড় দশক। প্রথম চলচ্চিত্র ‘প্রবাহিণী’ মুক্তি পায় ২০১৬ সালে।
একজন চিত্রপরিচালকের দিন কাটবে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করে- তা মানতে পারছেন না টালিউডির অনেকেই। এ প্রসঙ্গে পরিচালক রাজা সেন বলেন, ‘সুব্রত নতুন ভাবনা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেন। তার নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করাটা একেবারেই মানা যায় না।’ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স ডিরেক্টর অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিমল দে বলেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যের। সুব্রতবাবু টালিগঞ্জের পরিচিত মুখ। এখন যাদের হাতে ক্ষমতা, তাদের দলের লোকজনই শুধু কাজ পায়। সুব্রতবাবুর মতো অভিজ্ঞ মানুষেরা কাজ পান না। এতে বাংলা চলচ্চিত্রের দৈন্যদশাই ফুটে উঠছে।’
সুব্রতরঞ্জনের পরিচয় জানতে পেরে তাকে দারোয়ান হিসেবে ভাবতে এখন কুণ্ঠাবোধ করছেন ওই আবাসনের বাসিন্দারা। এ প্রসঙ্গে আবাসিক তারক দাস বলেন, ‘সুব্রতবাবু যে চিত্রপরিচালক আমাদের আবাসনের অনেকেই তা জানেন না। খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা যে তাকে দারোয়ানের কাজ করতে হচ্ছে।’