১৯৭১ সালের ১ আগষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে মুক্তিযদ্ধে বিধ্বস্ত বাংলাদেশের জন্য আয়োজন করা হয় কনসার্টের। এ আয়োজনে বিশ্বের নামিদামি গায়ক-শিল্পীরা বাংলাদেশের জন্য কনসার্ট করে সাহায্য চান বিশ্বের মানুষের। এককথায় অসাধারণ ছিলো অবিস্মরণীয় সেই সংগীতসন্ধ্যাটি। আজ সেই ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর ৪৮ বছর পূর্ণ হলো।
বিশ্ব বিখ্যাত সেতারবাদক পণ্ডিত রবিশঙ্কর ছিলেন এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা । তিনি প্রথম বাংলাদেশের জনগণের সাহায্যার্থে কিছু করার চিন্তা করেন। এরপর তিনি যোগাযোগ করেন জনপ্রিয় বিটলসের অন্যতম সদস্য জর্জ হ্যারিসনের সঙ্গে। হ্যারিসন তখন এগিয়ে আসেন এবং অন্য বড় বড় শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ সব মহান শিল্পীদের ডাকে সাড়া দিয়ে এই কনসার্টে ৪০ হাজার দর্শক উপস্থিত হয়েছিলেন।
এই অনুষ্ঠান থেকে উদ্যোক্তারা ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪১৮ দশমিক ৫০ ডলার সংগ্রহ করে ইউনিসেফের বাংলাদেশের শিশু সাহায্য তহবিলে প্রদান করেন। পরে ৪০টি মাইক্রোফোনে অনুষ্ঠানের গান ও কথা রেকর্ড করে তিনটি লং প্লেয়িং নিয়ে একটি বড় অ্যালবাম প্রকাশ করা হয়। সঙ্গে ছিল বহু রঙে মুদ্রিত সেই অনুষ্ঠানের একটি সুদৃশ্য সচিত্র পুস্তিকা।
পণ্ডিত রবিশঙ্করের একটি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিয়ে শুরু হয়েছিলো ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। এ কনসার্টের জন্য তিনি ‘বাংলাদেশ ধুন’ বলে নতুন একটি সুরও তৈরি করেছিলেন । সেই সুরের সঙ্গে সরোদ বাজিয়েছেন ওস্তাদ আলী আকবর খান। তবলায় ছিলেন বিখ্যাত আল্লারাখা, তানপুরায় ছিলেন কমলা চক্রবর্তী আর এ কনসার্টের অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন প্রতিবাদী গানের রাজা বব ডিলান। সেদিন তিনি ছয়টি গান গেয়েছিলেন। বিটলসের অন্যতম সদস্য রিঙ্গো স্টার, লিওন রাসেল, এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি প্রেস্টন, ডন প্রেস্টনসহ শিল্পীরা গান গেয়েছেন, বাজিয়েছেন গিটার।
জর্জ হ্যারিসনের লেখা একটি নতুন গান ছিলো সেদিন। হ্যারিসনের এই গান আর তাঁর মহতী উদ্যোগ আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামের ইতিহাসে সংহতি প্রকাশের বহু স্মরণীয় কার্যক্রমের মধ্যে এক সমুজ্জ্বল অধ্যায়। সেই গানটি ২০১১ সালের ২৯ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমে অনুষ্ঠিত ‘মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার’ ২০১০ অনুষ্ঠানে জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলস ইংরেজি থেকে অনুবাদ করে বাংলায় গানটি পরিবেশন করেছিলেন।
এই দিনে কালচারাল ইয়ার্ডের পক্ষ থেকে সেইসব মহতী শিল্পীদের প্রতি শ্রদ্ধা।