নিজস্ব প্রতিবেদক :
কিংবদন্তি বাঙালি অভিনেতা উৎপল দত্ত। তিনি একাধারে নাট্য অভিনেতা, নাট্য নির্দেশক, চলচ্চিত্র অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক ও একই সাথে লেখক। ভারতীয় বাংলা ছবিতে কাজ করে জনপ্রিয় হয়েছেন। সত্যজিত রায়ের হীরক রাজার দেশে সিনেমায় রাজার ভূমিকায় অভিনয় করে ইতিহাস হয়ে আছেন। তবে এই গুনী অভিনেতা ও পরিচালক জন্মেছেন বাংলাদেশের বরিশালে। গুনী এই অভিনেতার মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
১৯৯৩ সালের ১৯শে আগস্ট ৬৪ বছর বয়সে কলকাতায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এই দিনে কালচারাল ইয়ার্ড তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে।
আধুনিক ভারতীয় থিয়েটারের ইতিহাসে তিনি এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি মঞ্চনাটকে অভিনয় শুরু করেন। এরপর মঞ্চে নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন। কৌতুক অভিনেতা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি কৌতুক চলচ্চিত্র গুড্ডি, গোলমাল ও শৌখিনে অভিনয় করেছেন। অভিনয় করেছেন সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় হীরক রাজার দেশে, জয় বাবা ফেলুনাথ এবং আগন্তুক সিনেমায়।
১৯২৯ সালের ২৯ মার্চ অবিভক্ত বাংলার বরিশালে জন্মগ্রহণ করেছেন উৎপল দত্ত। তার পিতার নাম গিরিজারঞ্জন দত্ত ও মাতা শৈলবালা দত্ত। শিলঙের এডমণ্ড্স স্কুল, কলকাতার সেন্ট লরেন্স ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশুনা করেছেন তিনি। ১৯৪৮ সালে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে ইংরেজি বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে বিএ পাশ করেন তিনি।
ছাত্র অবস্থায়ই শেকসপিয়ারের নাটক দিয়ে শুরু অভিনয় জীবন। সৌখিন শেক্সপিয়ার দলে অনেক ইংরেজি নাটকেও অভিনয় করেছেন তিনি। তিনিেই প্রথম উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের হ্যামলেট নাটকে গোরখনকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
তিনি লিটল থিয়েটার গ্রুপের (এলটিজি) প্রতি্ঠিাতাদের একজন। এরপর তিনি ‘পিপলস লিটল থিয়েটার’ নামে আরেকটি নাট্যদল গঠন করেন। তার নির্দেশিত ও রচিত প্রায় প্রতিটি নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন।
উৎপল দত্ত অভিনয়ের ক্ষেত্রে ছিলেন অনুকরণীয় ব্যাক্তিত্ব। পিপলস লিটল থিয়েটারে ‘টিনের তলোয়ার’ নাটক তার একটি বড় পদক্ষেপ। তার রাজনৈতিক নাটকগুলোর মধ্যে পাওয়া যায় শ্রেণিচেতনা, ইতিহাস চেতনা ও মধ্যবিত্ত চেতনা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাটকগুলেঅ হলো: টিনের তলোয়ার, রাতের অতিথি, ছায়ানট, সূর্যশিকার, মানুষের অধিকার, টোটা, লাল দুর্গ, তিতুমীর, কল্লোল, দিল্লী চলো, ক্রুশবিদ্ধ কুবা প্রভৃতি। তাঁর নাটকে ইতিহাস চেতনা ও মধ্যবিত্ত চেতনা এক ভিন্নমাত্রা এনে দেয়।
তিনি বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রও পরিচালনা করেন। তাঁর পরিচালিত ছবিগুলোর মধ্যে আছে- মেঘ, ‘ঘুম ভাঙার গান, ঝড়, বৈশাখী মেঘ, মা ইত্যাদি।
তিনি নাট্যবিষয়ক বহু প্রবন্ধ ও গ্রন্থ রচনা করেছেন। অনুবাদ করেছেন বেশকিছু বিদেশি ভাষার নাটক। দীর্ঘকাল ধরে এপিক থিয়েটার নামক একটি সাময়িকী সম্পাদনা করতেন তিনি।
নাট্যচর্চায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি দীনবন্ধু পুরস্কার, রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার অর্জন করেন। তিনি পদ্মভূষণ উপাধি ও সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।