ঋত্বিক জাদুঘর করার দাবিতে বিসিটিআই প্রাক্তনীদের মানববন্ধন
প্রকাশের সময় :
নিজস্ব প্রতিবেদক:
উপমহাদেশের বরেণ্য চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈত্রিকভিটাকে স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (বিসিটিআই) প্রাক্তনী সংসদ। সরকারের কাছ থেকে ঋত্বিক ঘটকের পৈত্রিকভিটাকে স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি না পাওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায়ের ঘোষণা দেন সংগঠনটির নেতারা। প্রয়োজনে ঋত্বিক ঘটকের বাড়ির সামনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পরিকল্পনার কথাও বলেণ তারা।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে তারা এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বিসিটিআই প্রাক্তনী সংসদের সভাপতি মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম হামিদ এবং চলচ্চিত্র শিক্ষক হায়দার রিজভিসহ বিসিটিআই প্রাক্তনী সংসদের নবনির্বাচিত নেতাকর্মী, প্রাক্তনী সংসদের সদস্য, ইনস্টিটিউটের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে উঠে এসেছে ঋত্বিক ঘটকের পৈত্রিকভিটা সংরক্ষণের যৌক্তিকতা এবং প্রাসঙ্গিকতা। সেই সাথে ঋত্বিক ঘটকের চলচ্চিত্রে কীভাবে বার বার করে উঠে এসেছে এই বাংলার কথা – এই বাংলাদেশের কথা তার দিকে আলোকপাত করে বক্তারা এই স্মৃতিজাদুঘর নির্মাণ আমাদের জাতীয় দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেন।
বক্তারা তাদের বক্তব্যে বলেন, আমাদের সবারই মনে আছে ঋত্বিক ঘটকের “যুক্তি তক্কো আর গপ্পো” চলচ্চিত্রটির কথা, যেখানে শরণার্থী মেয়েটি বঙ্গবালা নাম ছিল যার, মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রাণভয়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আশ্রয় নিতে ঢুকে পরে ঋত্বিক অর্থাৎ চরিত্র নীলকণ্ঠ বাগচির ঘরে, তখন তিনি সেই আসহায় মেয়েটিকে নীড়হারা পাখি বলে অবহিত করেছিলেন তরুণ নচিকেতার কাছে আর সেই পাখিটির নাম বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে খানিকটা মাথা নাড়িয়ে কান্না জড়ানো কণ্ঠে (যেন গলায় ভেতর কি এক ভয়ানক বিষাদ আঁটকে রয়েছে) বলেছিলেন “বাংলাদেশ”। ঋত্বিক যখন সর্বস্বান্ত একদম পথের কিংবা বলা যায় ফুটপাতের মানুষ তখনো তার হৃদয় অসহায় বাংলাদেশকে আশ্রয় দিতে প্রস্তুত। এই ঋত্বিকের পৈত্রিকভিটা ভেঙ্গে ফেলার আস্পর্ধা করি কি করে আমরা? বাংলাদেশ কি পারবেনা ঋত্বিক ঘটকের পৈত্রিকভিটা খানিকে স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে মর্যাদা দিতে?
সরকারের কাছ থেকে ঋত্বিক ঘটকের পৈত্রিকভিটাকে স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি না পাওয়া পর্যন্ত তারা এই শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপগুলো চালিয়ে যাবেন বলে মানববন্ধনে ঘোষণা দেন। প্রয়োজনে ঋত্বিক ঘটকের বাড়ির সামনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পরিক্লপনার কথাও ব্যক্ত করেন আয়োজক বিসিটিআই প্রাক্তনী সংসদ।
মানববন্ধন শেষে বিসিটিআইয়ে ঋত্বিক কুমার ঘটক নির্মিত ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয়। চলচ্চিত্র প্রদর্শন শেষে ঋত্বিক ঘটকের জীবন ও কর্ম নিয়ে এক মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, বরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক কুমার ঘটকের জন্ম বাংলাদেশের ঢাকা শহরের ঋষিকেশ দাস লেনে। তাঁর জীবনের শুরুর সময়টা কাটিয়েছেন পৈতৃক বাড়ি রাজশাহীতে। এই বাড়িতে থাকার সময় তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজে পড়েছেন। রাজশাহী কলেজ এবং মিঞাপাড়ার সাধারণ গ্রন্থাগার মাঠে প্রখ্যাত সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে নাট্যচর্চা করেছেন। ওই সময় ‘অভিধারা’ নামে সাহিত্যের কাগজ সম্পাদনা করেছেন ঋত্বিক। তাকে ঘিরেই তখন রাজশাহীতে সাহিত্য ও নাট্য আন্দোলন বেগবান হয়। এই বাড়িতে থেকেছেন ঋত্বিক ঘটকের ভাইঝি বরেণ্য কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী। বহু স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়ি। তাই স্বাভাবিকভাবেই এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে।