ডায়েল রহমান :
২০১২ সালে ‘দুদু মিয়া’ শিরোনামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করি। সেটি ২০১৯ সালে এসে ‘ফরায়েজী আন্দোলন ১৮৪২’ নামে মুক্তি পায়। সিনেমাটি নির্মাণ করে না আমি সন্তুষ্ট হতে পেরেছি। না দর্শকদের সন্তুষ্ট করতে পেরেছি। সব মিলিয়ে ৮ বছরের একটি ব্যর্থতার গল্প। আজ দুদু মিয়া থেকে ফরায়েজী আন্দোলন এবং তার ব্যর্থতার অন্তরালের গল্প নিয়ে লিখছি।
চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে ২০০৫ সালে গুনী চলচ্চিত্রকার ছটকু আহমেদের হাত ধরে এই জগতে এসেছি। প্রায় ২৬টি সিনেমার স্ক্রিপ্টের সহকারি হিসেবে উনার সাথে কাজ করি। সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করি ৩টি চলচ্চিত্রে। ২০০৭ সালে সিনেমাতে যখন অশ্লীলতা দেখা দেয়, তখন নাটক বানাতে শুরু করি। ২০০৮ সালে রাজা ‘গৌড় গোবিন্দ’ নামে একটি ১৩ পর্বের সিরিয়াল নির্মাণ করি। এর কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন চিত্রনায়ক ওমর সানি। সিরিয়ালটি সে সময়ে দিগন্ত টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়। এরপর এটিএন বাংলার জন্য নির্মাণ করি ‘বাংলার বারো ভূইয়া’ নামে ৫২ পর্বের ধারাবাহিক নাটক। এছাড়াও টেলিফ্লিম ‘যোধা আকবর’, ‘দেবদাস’, ‘রজকিনী-চন্ডীদাস’, ‘ক্ষুদিরামের ফাঁসি’ নির্মাণ করি।
সিনেমা নির্মাণের সেই স্বপ্নটা আমাকে বার বার তাড়িত করছিলো। ২০১২ সালে এসে শুরু করি সেই স্বপ্ন নির্মাণের কাজ। নাম দেই ‘দুদু মিয়া’। অনেক রিসার্চের পর তৈরি করি চিত্রনাট্য ও সংলাপ। এতে গুরু ছটকু আহমেদও আমাকে বেশ সহযোগিতা করেন। প্রি-প্রোডাকশন শেষে শুরু হয় নির্মাণ কাজ। শুরুতে ছবিটির বাজেট ছিলো ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সেই হিসেবেই সিনেমাটির ৩৫% কাজ সমাপ্ত করি। এরপর শুরু হয় স্বপ্ন ভঙ্গের গল্প…
নির্মাতা ডায়েল রহমানের নতুন চলচ্চিত্রের খবর :
⇒ তায়েব-ববিকে নিয়ে ডায়েল রহমানের নতুন ছবি ‘ঈসা খাঁ’
অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে বন্ধ হয়ে যায় সিনেমার বাকি কাজ। প্রযোজকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সিনেমাতে টাকা ফেরত আসে না। এমনকি যা টাকা খরচ হয় তার অর্ধেকও আসে না। তাই তারা অন্য ব্যবসা করবেন। তারা আর টাকা দিতে পারবেন না। এরপর আর কোন শক্তিমান প্রযোজকও পাওয়া গেলো না। আমি পড়ে গেলাম হতাশা সাগরে…
একটি সিনেমা একজন পরিচালকের কাছে সন্তানের মতো। কোন বাবা কখনও তার সন্তানকে পৃথিবীর আলো না দেখিয়ে মেরে ফেলতে পারে না। নিরুপায় হয়ে নিজের ব্যবহৃত গাড়িটি বিক্রি করে দিলাম। অনেক কষ্টে একজন প্রযোজককে সাথে নিয়ে আবারও কাজ শুরু করলাম। এতে কেটে গেলো অনেকটা সময়।
সার্বিক পরিস্থিতির কারণে অনেক কিছুই পাল্টে গেলো। ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার বাজেট নেমে আসলো ৪৬ লাখ টাকায়। ফলে চিত্রনাটের ৪০% দৃশ্য পরিবর্তন করতে হলো। ব্রিটিশ এক অভিনেতাসহ অনেক কাস্টিং পাল্টে গেলো। এর মধ্যে কয়েকজন আবার এই পৃথিবী ছেড়েও চলে গিয়েছেন।
নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে শেষ করলাম ছবিটি। কিন্তু যে স্বপ্ন নিয়ে শুরু করেছিলাম, সেই স্বপ্নটা পূরণ হলো না। কারণ ইতিহাস নিয়ে কাজ করতে গেলে ব্যাপক গবেষণা এবং ভালো অভিনেতা-অভিনেত্রী দরকার। দরকার দক্ষ টিমের। আর এসব কিছুই নির্ভর করে ভালো বাজেটের উপর। সব মিলিয়ে সিনেমাটি বানিয়ে নিজে সন্তুষ্ট হতে পারলাম না। যার ফলাফল, দর্শকরাও সিনেমাটি দেখে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারে নি। কারণ ইতিহাসভিত্তিক চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে তাদের প্রত্যাশাটা অনেক বেশি থাকে। সেক্ষেত্রে আমি তাদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছি।
ব্যর্থতাই আসলে শিক্ষা নিতে হয়। আমিও নিয়েছি। তাই এখনও স্বপ্ন দেখি একটি ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণের। যার মাধ্যমে দর্শকদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারবো। পূরণ করতে পারবো নিজের স্বপ্নকে।
লেখক : চলচ্চিত্র নির্মাতা