মহামারীকালে সত্যজিতের ‘অশনি সংকেত’ হতে পারে সতর্কতা
প্রকাশের সময় :
আহমেদ জাবের চৌধুরী :
বিশ্ব মহামারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দিশেহারা মানবসমাজ। এ মহামারীর সময়ে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক টানাপোড়েন স্পষ্ট বিশ্বজুড়ে। এর সঙ্গে মনুষ্যসৃষ্ট সমাজব্যবস্থায় ক্ষুধার মহামারী তৈরি করে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে মজুতদারী ও অব্যবস্থাপনা ক্ষুধার মহামারী বিস্তার ঘটিয়েছে। আর সত্তরের দশকে এমন চিত্রই ফুটিয়ে তুলেছেন সত্যজিৎ রায় তার ‘অশনি সংকেত’ সিনেমায়। সত্যজিতের নির্মাণ তখনকার বাস্তবতায় প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করেছে।
‘অশনি সংকেত’ প্রতিটি কালের প্রতিটি প্রজন্মের জন্য ‘আগাম সংকেত’ হতে পারে। একটি অনিশ্চিত আর্থ-সামাজিক অবস্থা কিভাবে যে কোন সময় মানুষের সামাজিক অবস্থাকে এলোমেলো করে দিতে পারে তার একটি বিরল দৃষ্টান্ত হতে পারে এই নির্মাণ। পাশাপাশি অসংগঠিত মানবগোষ্ঠী আদতে স্রষ্টার কাছেও যে মূল্যহীন এরকম একটি কঠিন সংকেত দেয় এই সিনেমা। এমনকি রাজনৈতিকভাবে অসচেতন হলে যে অন্য রাজাদের যুদ্ধ নিজেদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয় তারও একটি সুন্দর সংকেত দিয়েছেন ‘সত্যজিৎ রায়’।
সিনেমাটিতে সামাজিক মর্যাদাকে অক্ষুণ্ণ রেখে টিকে থাকার লড়াইয়ে অভিনেত্রী হিসেবে ববিতা তার যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। তিনি মহামারীতে ধৈর্য ধারণের অসীম ক্ষমতাকে অভিনয়ের মাধ্যমে চমৎকার তুলে ধরেন। হয়তোবা তাঁর পরিবর্তে এই চরিত্রে অন্য কাউকে কল্পনা করা যাবে না। তাছাড়া সত্যজিৎ রায়ের নির্বাচিত অভিনেত্রী বলে কথা।
মহামারীতে খাদ্য সংকট দেখা দিলে মানুষ প্রাণীতে রূপান্তরিত হতে পারে। তার একটি চিত্র আমরা এই সিনেমাতে দেখেছি। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ত্রাণের গাড়ি থেকে চাল লুট করার বাস্তব ঘটনাও আমরা দেখেছি। এই চিত্র ‘অশনি সংকেত’-এ সত্তর দশকেই দেখিয়ে গেছেন সত্যজিৎ রায়।
এছাড়া সিনেমাটিতে সত্যজিৎ রায় ধর্মীয় ব্রাম্মন গুরু ‘গঙ্গাচরণ চক্রবর্তী’র চরিত্র রুপায়ন করেছেন। যিনি ধর্মকে ব্যবহার করে এ দেশের সহজ সরল মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে নিজের পুঁজি গড়ে। ‘দীনবন্ধু’ এ দেশের মজুতদারী রাজনীতিকের চরিত্র।
‘অশনি সংকেত’ সিনেমাটি নি:সন্দেহে সকলের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে। তবে সত্যজিৎ নির্মিত সিনেমাটি তখনই সফল হবে যখন আমরা এর থেকে আগাম সংকেতগুলো নিয়ে প্রস্তুতি রাখতে পারবো।