রোমান কবির :
একটি কিশোরী, তার বয়োসন্ধিকাল পুরুষতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থা, ধর্ম ব্যবস্থা ও প্রযুক্তিতে বন্দি। সেই নারীর সমস্ত যৌনজীবনের চাবি পুরুষের হাতে। এখানে চাবি একটা মেটাফোরিক চরিত্র হিসেবে হাজির হয়। যে চাবি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয় নারীর শরীর ও মানসিক যাতনাকে।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রযোজিত তরুণ নির্মাতা শোয়াইব হক পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘বিয়ন্ড’ এরকম মেটাফোর নিয়ে হাজির হয়েছে। সাড়ে সাত মিনিট দৈর্ঘ্যের সিনেমাটি ‘ফিল্ম ফর হিউমিনিটি’ ক্যাম্পেইন এর আওতায় আন্তর্জাতিক প্লাটফর্ম ভিমিয়োতে প্রদর্শিত হচ্ছে।
অন-ডিমান্ড-রেন্টাল সিস্টেমে ছবিটি দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর যে কোনও প্রান্ত থেকে। এ ছবি থেকে প্রাপ্ত অর্থ করোনাভাইরাস মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায়, দুস্থ ও দিনমজুরদের সাহায্যার্থে অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের পেপল অ্যাকাউন্টে দেওয়া হবে। তাদের অ্যাকাউন্ট যুক্ত আছে ভিমিয়ো পেজের সঙ্গে।
দর্শকরা চাইলে সিনেমাটি দেখে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বিকাশ নম্বরেও সরাসরি টাকা পাঠাতে পারেন। এছাড়া বিকল্প ব্যবস্থায় ছবিটি দেখতে বিদ্যানন্দের বিকাশ মার্চেন্ট ০১৮৭৮১১৬২৩০ নাম্বারে ৯০ টাকা পেমেন্ট করে রশিদ পাঠিয়ে একটা ইউনিক প্রমো কোডের মাধ্যমে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ছবিটি দেখা যাবে।
‘ফিল্ম ফর হিউমিনিটি’র আরও খবর :
⇒ করোনা ভাইরাসে অসহায় মানুষের জন্য অনলাইনে চলচ্চিত্র উৎসব
স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমাটি মূলত মেটাফোরিক ওয়েতে আমাদের সমাজের একাধিক গল্পের একাংশ বলে গেছে। নির্মাতা ছোট ছোট শটে সমাজের বয়োসন্ধিকালের এক তরুণীর কিছু সময়ের চিত্র তুলে আনার চেষ্টা করেছেন। চলচ্চিত্রটি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মেটাফোর হিসেবে হাজির হয়েছে।
এ ছবিতে সূক্ষ্ণভাবে হাজির হয়েছে একটি অবজেক্ট, সেটি হচ্ছে একটি চাবি। যে চাবির নিয়ন্ত্রক পুরুষ ও পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থা। একটি জমিদার বাড়ি, কিশোরী নারীর দু:সহ সকাল, ভেজা শরীর, নিজের শরীরের প্রতি, নিজের কাপড়ের প্রতি বিরক্তি। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা ও আধুনিক প্রযুক্তির নারীকে বন্দি করার মনোবৃত্তি, সঙ্গে সঙ্গে ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থা ও ধর্মীয় মনোবৃত্তি। এ পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নারী স্বপ্ন দেখে নতুন দিনের, বাঁচতে চায় নতুন করে।
৭ মিনিটে গোটা সমাজবাস্তবতার চিত্রায়নে সাহসী পদক্ষেপ-ই নিয়েছেন নির্মাতা যা ভাবতে সাহায্য করে। সিনেমাটোগ্রাফার মিথুন কর্মকার পরিচালকের ভাবনা বুঝে চিত্রধারণে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। সিনেমার সাউন্ড ও মিউজিক ছবির আবহকে পুরোপুরি ধরে রেখেছে। পরিচালক শোয়াইব নিজেই এতে সাউন্ডে কাজ করেছেন নিজের মতো করে। তার সঙ্গ মিলে সাউন্ড করেছেন ফয়সাল ইবনে মিজান, শারমিন দোজা, মামুন আল ফয়সাল। এডিটিংয়ে শারমিন দোজা ছিলেন পরিপক্ক বোঝাই যায়। সিনেমার ম্যাচ কাটগুলো এর বুননে গুরুত্ব রেখেছে দক্ষভাবেই। মোহেতোষ কান্তির শিল্প নির্দেশনা ছিলো মোহনীয়। ভাঙা জমিদার বাড়ির জমিদারি আবহ, গাছ পোশাক ও বিভিন্ন সবুজ প্রকৃতির মধ্যে সবুজ ফুল, ফল একটি স্বাপ্নিক আবহ নির্মাণ করার চেষ্টা ছিলো।
তরুণ এ নির্মাতার এই সিনেমা নতুন ভাবনার স্বাদ দিতে পারে যারা সমাজ বাস্তবতা ও মানুষের মনস্তত্ত্ব বুঝতে চান।
লেখক : সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা