রোমান কবির :
মিডিয়ায় কাজ করবো এই স্বপ্ন ছেলেবেলা থেকেই দেখি। স্কুল কলেজ পেরিয়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডিতে ঢুকেছি তখন থেকেই কাজ শুরু করি সংবাদপত্রে। তবে স্বপ্ন টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র মাধ্যমে কাজ করবো। অভিনেতা সৌমিত্র চট্টপাধ্যায়, আসাদুজ্জামান নূর, সুবর্ণা মোস্তফাকে দেখে তাদের মতো কবিতার মতো করে কথা বলবো এটি ছিলো চাওয়া। এছাড়া মিডিয়ায় কাজ করতে হলে শুদ্ধ উচ্চারণ জানার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, সেই চাওয়া থেকে ভর্তি হয়েছিলাম বাচিক চর্চা প্রতিষ্ঠান কণ্ঠশীলনে। সেখানে প্রথমেই সান্নিধ্য পেয়েছিলাম আবৃত্তির শিক্ষক মীর বরকতের।
তাঁর ক্লাসে যে ব্যাচে ভর্তি হয়েছিলাম সেই ব্যাচের আবৃত্তি করা প্রথম শিক্ষার্থী ছিলাম আমি। আবৃত্তি করার পর তিনি উচ্চারণের নানাবিধ ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন হাতে কলমে। যে শিক্ষা সারাজীবনের পাথেয় হয়ে সাথে রয়েছে।
প্রিয় শিক্ষাগুরু মীর বরকতের আজ ৬২তম জন্মদিন। শিক্ষাগুরুর জন্মদিনে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা।
প্রতি শুক্রবার সকাল আটটায় ক্লাস হতো। শীতের কনকনে ঠান্ডায় জুবুথুবু হয়ে টিএসসির দ্বিতীয় তলায় জড়ো হতাম আমরা। একটি ঝোলা কাঁধে নিয়ে ক্লাসে ঢুকতেন মীর বরকত। ঝোলা থেকে বের হতো তাঁর নিজ হাতে লেখা বই ‘আবৃত্তির ক্লাস’। সেই বইয়ে নানা ছন্দে লেখা ছড়া। সেই বই সামনে ধরে বসতাম আমরাও।
তিনি সুর করে করে পড়াতেন ওপেনটি বায়োস্কোপ, নাইনটেইন টেইস্কোপ/ চুলটানা বিবিআনা লাট্টু বাবুর বৈঠকখানা অথবা জামাইরো চুলরে বট গাছের ঝুরিরে / আহা মরি কাঁচা সোনা জামাইরে অথবা হি হি হি / হাসি হাসবো নাতো কি / হাসির বায়না দিয়েছি। এসব সুর করে করে ঢুলে ঢুলে শিক্ষক মীর বরকতের সঙ্গে সঙ্গে পড়তাম আমরা। ছেলেবেলায় ঢুলে ঢুলে যেমন ছড়া মুখস্ত করতাম, ঠিক সেভাবেই।
আবৃত্তিকার হিসেবে প্রস্ফুটিত হই নি, তবে আবৃত্তির প্রতি টান সৃষ্টি হয়েছে মীর বরকতের ক্লাস থেকেই। এখন মাঝে সাঝে নিজে নিজে আবৃত্তি করা হয়, ঘরে নিভৃতে মন ভালো বা খারাপ থাকলে আয়নার সামনে।
আবৃত্তিশিল্পী ও নাট্যনির্দেশক মীর বরকত
একজন সদালাপী, হাস্যজ্বল ও বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ মীর বরকত। ষাটের কোটা পেরুলেও তিনি নিজেকে একজন তরুণ মনে করেন। ২৮ বছরের তরুণ-তরুণীদের সঙ্গেই তিনি সময় কাটাতে ভালোবাসেন। এই তরুণরাই তাঁর বন্ধু-স্বজন, সহযোদ্ধা।
নানা গুনে গুনান্বিত মীর বরকত একাধারে একজন আবৃত্তিশিল্পী, বাচিকশিল্পী, নাট্যনির্দেশক, অভিনেতা এবং একই সঙ্গে দক্ষ প্রশিক্ষক ও সংগঠক। আপাদমস্তক একজন আধুনিক সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব তিনি।
মীর বরকত সোনালী ব্যাংকে চাকরি করতেন। কিন্তু ব্যাংকের সেই নিরাপদ জীবিকা ছেড়ে তিনি ফুলটাইম আবৃত্তিশিল্পী ও শিক্ষক হিসেবে নিজেকে আত্ননিয়োগ করলেন। এই দিনে এমন নজির সত্যিই বিরল।
মীর বরকত কণ্ঠশীলনের অধ্যক্ষ। এছাড়া তিনি দেশের বিভিন্ন জেলায় শতাধিক আবৃত্তি ও নাট্যসংগঠনে প্রশিক্ষক হিসেবে যুক্ত আছেন। তিনি অর্ধশতাধিক আবৃত্তি প্রযোজনা করেছেন। এছাড়া তিনি তিনটি মঞ্চনাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন।
‘যা নেই ভারতে’ ও ‘যাদুর লাটিম’ মীর বরকতের নির্দেশনায় নির্মিত নাটক। যা দর্শক মহলে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে।