সাকিল সৈকত :
শ্রমিক নেতা আসাদ স্বার্থবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় শ্রমজীবিদের ভুখামিছিল বের করে স্বার্থবাদী রাজনীতিকদের হাতে প্রাণ হারান। অনেক বছর পর সেই স্বার্থবাদী গোষ্ঠীটিই রাজনীতিতে জেঁকে বসে। তারই পরের প্রজন্ম তার ছেলে অনিক একজন ছাত্রনেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। বাবার আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে কলেজ সংসদ রাজনীতি করেন। কলেজের ভিপি অনিক ছাত্রদের অধিকারে সোচ্চার। লেজুরবৃত্তিক রাজনীতি অস্ত্রধারী ছাত্ররাজনীতিকে সাধারণ ছাত্রদের নিয়ে প্রতিহত করে সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস রাখায় ভূমিকা পালন করে। কিন্তু নিজের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে অনিকের মতো ছাত্রনেতাকে ব্যবহার করে সংবাদপত্রের মালিক ও রাজনীতিক। তার হাতে তুলে দেয় অস্ত্র। রাজনীতি ও ব্যাক্তি আদর্শের দ্বন্ধ সংঘাতমূলক চলচ্চিত্র ‘বিক্ষোভ’।
নব্বই দশকে মুহম্মদ হান্নান সিনেমাটি পরিচালনা করেন। সিনেমায় আদর্শিক ছাত্রনেতা অনিকের চরিত্রে অভিনয় করেন ঢালিউডের বরপুত্র জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ। ছবিটি একটি মেটাফোর। বিশেষ করে নব্বই দশকের একটি রাজনীতিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে ছবিটি অনেক কিছু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। যেখানে আমাদের বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে বেশিরভাগই অনুপস্থিত থাকে রাজনীতি। থাকলেও তা উপেক্ষিত হয়ে প্রেম প্রাধান্য পায়। সেখানে সে সময়ের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে এরকম একটি সিনেমা নির্মাণ দু:সাহসিকই বটে। এ সিনেমায় অনিকের চরিত্রে অভিনয় করেও এক দু:সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন সুপারস্টার সালমান শাহ।
৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহ’র মৃত্যুবার্ষিকী গেলো। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর সালমানের জন্মবার্ষিকী। ২৪ বছর হলো সালমান নেই। সালমানের অভিনয়গুনে বিক্ষোভ সিনেমায় অনিকের চরিত্রটি এত বছর পরও প্রাসঙ্গিক।
অমর নায়ক সালমান শাহ সংক্রান্ত আরও খবর
⇒ প্রজন্মান্তরের তরুণদের আইকন সালমান শাহ
⇒ স্বপ্নের নায়ক সালমান শাহ
‘বিক্ষোভ’ সিনেমাটি দেশের ছাত্র রাজনীতির একটা মেটাফোর। এ সিনেমার অনিক চরিত্রটি প্রতিবাদী লেজুড়হীন ছাত্ররাজনীতির মেটাফোর। সিনেমাটিতে অনেক সাহসী সংলাপ যে কোন দেশপ্রেমিক মানুষকে উদ্দীপ্ত করে। একবার সালমান শাহকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো কোন সিনেমার সংলাপ বলতে গিয়ে আপনাকে একবার ভাবতে হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, বিক্ষোভ সিনেমায় মায়ের সঙ্গে যে সংলাপটি ছিলো সেটি হলো- মা আমি শখের বসে রাজনীতি করিনা।
বিক্ষোভ সিনেমার প্রতিটা গান উদ্দীপনা জাগায়। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ছাত্রসমাজকে এখনও সক্রিয় থাকতে হবে। সিনেমাটিতে দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ছাত্ররাজনীতির ভূমিকা ও স্বাধীন দেশে একটি স্বাধীন ছাত্ররাজনীতির স্বরূপ তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে একটি গান ‘বিদ্যালয়, মোদের বিদ্যালয়, এখানে সভ্যতারই ফুল ফোটানো হয়, এখানে জ্ঞানের আলোর মশাল জ্বেলে, হয় রে সূর্যোদয়’- সিনেমার এ গানটিতে লিরিক্স, গায়কীর সঙ্গে সঙ্গে চিত্রায়নের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্র রাজনীতির ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে। কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা ও খালিদ হাসান মিলুর কণ্ঠে গাওয়া গানে ঠোঁট মিলিয়েছেন নায়ক সালমান শাহ ও নায়িকা শাবনূর। যা উদ্দীপনার পারদে ঘি ঢেলে দিয়েছে যেন।
এছাড়া আগুন ও রুনা লায়লার কণ্ঠে ‘একাত্তরের মা জননী, কোথায় তোমার মুক্তি সেনার দল’- গানটি প্রেরণায় উদীপ্ত করে।
দেশের লেজুরবৃত্তিক রাজনীতি, স্বাধীনতার প্রেরণাকে ভুলুন্ঠিত করে সন্ত্রাসবাদী স্বার্থান্বেষী রাজনীতি কিভাবে শাখা প্রশাখা বিস্তার করে সমাজ ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেয়। এটি পরতে পরতে বুঝিয়েছেন পরিচালক। এর বিপরীতে অন্যায়কে প্রতিহত করে একটি ন্যায়মূলক রাজনীতির চর্চাকে কিভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় এর মেটাফোরও চলচ্চিত্রটি। বিশেষ করে একটি প্রতিবাদী ছাত্রনেতা অনিক যেন সত্যিকার একজন ন্যায়বাদী ছাত্র নেতৃত্বের প্রতীক। তার বলা সংলাপও যেন এক একটা এ সমাজের প্রতীকি সংলাপ। যেমন অনিকের মুখে একটি সংলাপ এমন- দুই কুকুরের কামড়াকামড়িতে আমাদের মতো ইনোসেন্ট ছেলেরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আর কত জেহাদরা জীবন দিবে। আর কত রাজারা খুনি হয়ে এ সমাজে ঘুরে বেড়াবে। তোদের দু’জনের মুখোশ আজই জনগণের সামনে খুলে দেবো।
একনজরে ‘বিক্ষোভ’ সিনেমা
চলচ্চিত্র: বিক্ষোভ
পরিচালক: মুহম্মদ হান্নান
দৈর্ঘ্য: ১২০ মিনিট
প্রযোজক: শেখ দিদার
চিত্রনাট্যকার: মহম্মদ হান্নান
কাহিনিকার: ফরিদা হোসেন, জোসেফ শতাব্দী (কাহিনী বিন্যাস)
অভিনয়ে: সালমান শাহ, শাবনূর, বুলবুল আহমেদ, রাজিব, ডলি জহুর
সুরকার: আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল
চিত্রগ্রাহক: আজমল হক
সম্পাদক: শফিকুল ইসলাম শফিক
পরিবেশক: ডি এম ফিল্মস
মুক্তি: ৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৪
দেশ: বাংলাদেশ
ভাষা: বাংলা