নিজস্ব প্রতিবেদক:
সুস্থধারার চলচ্চিত্র সংস্কৃতি রক্ষায় ‘কার্যকর বিসিটিআই রূপরেখা’ প্রণয়নে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ‘বিসিটিআই বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী সম্মিলন পরিষদ’। অবস্থান কর্মসূচিতে ৯ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। এ লক্ষে স্বাক্ষরতা অভিযান শুরু করেছে সংগঠনটি।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রাক্তনী সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও ‘বিসিটিআই বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী সম্মিলন পরিষদ’র আহ্বায়ক রাজন তালুকদার এ কথা জানিয়েছেন।
রোববার (১ নভেম্বর) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। ৯ দফা দাবিতে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। এ কর্মসূচি থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ‘বিসিটিআই বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী সম্মিলন পরিষদ’র আহ্বায়ক রাজন তালুকদার জানিয়েছেন, সুস্থধারার চলচ্চিত্র সংস্কৃতি অব্যাহত রাখতে এবং এদেশে দক্ষ, সৃজনশীল চলচ্চিত্রকর্মী, নির্মাতা, কলাকুশলী, শিক্ষক ও গবেষক বিনির্মাণে একটি জাতীয় চলচ্চিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা চলচ্চিত্রকর্মীদের সুদীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ফসল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় গড়ে ওঠা চলচ্চিত্র শিল্পের একটি জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিসিটিআই ইতোমধ্যে সাত বছর পূর্ণ করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নির্মিত চলচ্চিত্র জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্তির পাশাপাশি দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সুনামের সাথে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছে এবং করছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, সম্প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো ও প্রশাসনিক নানাবিধ জটিলতার কারণে অনেক সম্ভাবনাময় একটি প্রতিষ্ঠান আজ মৃতপ্রায় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন : বিসিটিআইয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ কোর্স
রাজন তালুকদার জানিয়েছেন, এমতাবস্থায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রাক্তণ ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (বিসিটিআই) কে একটি আধুনিক ও কার্যকরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে ‘আধুনিক বিসিটিআই রূপরেখা’ শীর্ষক চলমান আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে ৯ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। এ লক্ষে ১ নভেম্বর রবিবার বিসিটিআই প্রাঙ্গণে অবস্থান ও স্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা হয়।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রাক্তনী সংসদের সভাপতি মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে অবস্থান কর্মসূচিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা স্বজন মাঝিসহ বিসিটিআই’র ৬টি ব্যাচের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিল।
বিসিটিআই সম্পর্কিত আরও খবর :
⇒ বিসিটিআইকে আমি আর ফিল্ম ইনস্টিটিউট বলবো না: মোহাম্মদ হোসেন জেমী
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (বিসিটিআই) কে একটি আধুনিক ও কার্যকরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে ৯ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে:
১) প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী/মহাপরিচালক ও গভর্নিং বডির সভাপ্রধান/চেয়ারপার্সন হিসেবে চলচ্চিত্র/ টেলিভিশন মাধ্যমের অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্বকে দায়িত্ব দেয়া। এবং দায়িত্বের মেয়াদকাল ন্যুনতম ২ বছর করা।
২) কার্যকরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার লক্ষ্যে একটি একাডেমিক কাউন্সিল গঠন করা, যার অধীনে বিষয়ভিত্তিক গবেষণা ও সেমিনার অন্তর্ভুক্তি সহযোগে একটি মানসম্পন্ন কারিকুলাম প্রণয়ন হবে।
৩) বর্তমান ডিপ্লোমা ডিগ্রির (২ বছর মেয়াদী কোর্স) সনদ বাতিল করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা।
৪) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (বিসিটিআই) এর জন্য বরাদ্দকৃত জায়গায় নিজস্ব ভবন নির্মাণের কাজ দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করা এবং স্থায়ী জনবল নিয়োগ দেয়া।
৫) বর্তমান প্রণিধানমালার কিছু ধারায় সংশোধনী সাপেক্ষে শিক্ষক হিসেবে চিফ ইন্সট্রাক্টর, সিনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদের স্থলে প্রভাষক, সহকারি অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদের অন্তর্ভুক্তি করা। এবং চলচ্চিত্র বিষয়ে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞদের বয়সসীমা শিথিল রেখে শিক্ষক ও কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিসিটিআই’র মেধাবী নির্মাতা/ শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়া।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট-এর প্রাক্তনীদের খবর :
⇒ বিসিটিআই প্রাক্তনী সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত
৬) চলমান শিক্ষা কোর্সের (২ বছর মেয়াদী) সমাপনী চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য ভ্যাট ও ট্যাক্স ব্যতীত ন্যুনতম বাজেট ৫,০০,০০০.০০ (পাঁচ লক্ষ টাকা) নির্ধারণ করা।
৭) চলচ্চিত্র শিল্পের ও নির্মাণ মানের উৎকর্ষ বিবেচনায় বিসিটিআই শিক্ষার্থীদের সাথে বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত চলচ্চিত্র স্টুডিও, ইনস্টিটিউট, একাডেমী প্রভৃতি সাথে শিক্ষা বিনিময় এবং সরকারিভাবে স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা। সেক্ষেত্রে আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইংল্যান্ড, ইতালি, ভারত, হাঙ্গেরি, রাশিয়া, তুরস্ক, ইরান, কোরিয়া, জাপান ও চীনের সরকারি চলচ্চিত্র স্টুডিও/ ইনস্টিটিউট সমূহকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে বিবেচনায় রাখা।
৮) বিসিটিআই’র কোর্স (২ বছর মেয়াদী) সম্পন্ন করা মেধাবী শিক্ষার্থীদের সরকারি অর্থায়নে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের সুযোগ দেয়া। এবং প্রতিবছর এই প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব করা।
৯) একাডেমিক কাউন্সিল ও গভর্নিং বডিতে বর্তমান/চলমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিনিধিত্ব করার ব্যবস্থা রাখা। বর্তমান প্রণিধানমালায় শিক্ষার্থীদের চলচ্চিত্র সংসদ গঠন কার্যক্রম ও অস্বচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থী/ নির্মাতাদের কল্যাণে এককালীন তহবিলের বিধান রাখা।