চলে গেলেন বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশের অভিনেত্রী জহরত আরা। তিনি ছবিটিতে অভিনেতা মনসুর আলীর স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। গত ১৯ জুলাই লন্ডনের একটি কেয়ার হোমে ৮০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। জহরত আরা লন্ডনের নরউইচে বসবাস করতেন।
১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট আবদুল জব্বার খান পরিচালিত ‘মুখ ও মুখোশ’ ছবিটি মুক্তি পায়। এটি বাংলা ভাষার প্রথম কোনো পূর্ণদৈর্ঘ্য সবাক চলচ্চিত্র। আবদুল জব্বার খান পত্রিকায় প্রকাশিত একটি ডাকাতির খবরকে কেন্দ্র করে ‘ডাকাত’ নামে একটি নাটক লিখেছিলেন। সেই কাহিনীকে ঘিরেই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়।
ছবিটিতে দেখা যায়, গ্রামের এক জোতদারের দুই ছেলে ঘটনা-পরম্পায় ডাকাতদলের খপ্পরে পড়ে। তাদের সঙ্গেই বেড়ে ওঠে এক ছেলে ডাকাত হয়। আরেক ছেলে পড়ালেখা করে পুলিশ হয়। ডাকাতদলের সঙ্গে অসৎ পুলিশের যোগাযোগ ছিল। পরিচয় না জানলেও ডাকাত-পুলিশ যোগাযোগের সূত্রে ভাই-ভাই যোগাযোগ তৈরি হয়। এক পর্যায়ে ডাকাত ভাই তার সর্দারকে খুন করে। অসৎ পুলিশ ভাই গ্রেপ্তার হয়। কাহিনী শেষ হয় জোতদার বাবার দুই ছেলেকে ফিরে পাওয়ার মধ্য দিয়ে।
মুখ ও মুখোশের প্রযোজনা করেন ইকবাল ফিল্মস। পঞ্চাশের দশকে মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের জন্যও নারী শিল্পী পাওয়া যেতোনা। পরিচালক আব্দুল জব্বার শুরুতে ভেবেছিলেন, কোনো পুরুষকেই নারী সাজিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড় করিয়ে দেবেন। তখন মঞ্চ নাটকে নারী চরিত্রে পুরুষদের অভিনয়ের চল ছিল। পরে মুখ ও মুখোশের অভিনেত্রী খুঁজতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন তিনি।
চিত্রালী ম্যাগাজিনে বিজ্ঞাপন দেখে তৎকালীন ইডেন কলেজের ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্রী জহরত আরা তার বান্ধবী পিয়ারী বেগমকে নিয়ে নবাব কাটরায় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইকবাল ফিল্মসের অফিসে যান। সেখানে সিলেক্টেড হন তিনি। তিনি একজন অ্যাথলেট হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। ভাষা আন্দোলনেও তিনি অংশ নিয়েছিলেন।
‘মুখ ও মুখোশ’ মুক্তি পাওয়ার পর ব্যাপক সাড়া পড়ে। জহরত আরার অভিনয় দর্শকমহলে প্রশংসা পায়। তবে পরে আর কোনো চলচ্চিত্রে তাকে দেখা যায়নি।