করোনা কেড়ে নিল গণসঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীরকে। রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের কোভিড আইসিইউতে শুক্রবার ২৩ জুলাই রাত ১১টার দিকে মারা যান তিনি। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
তিনি স্ত্রী ও তিন ছেলেসহ অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী রেখে পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে। কালচারাল ইয়ার্ড পরিবার এই গুনী সঙ্গীতস্রস্টার মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত।
ফকির আলমগীরের পরিবার তাঁর মৃত্যুর খবর জানিয়ে বলেছেন, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কোভিড ইউনিটে ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থায় তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়। রাত ১০টা ৫৬ মিনিটে ইউনাইটেড হাসপাতালের কোভিড আইসিইউ ইউনিটের ডাক্তাররা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফকির আলমগীর বেশকিছুদিন ধরে জ্বর ও খুসখুসে কাশিতে ভুগছিলেন। পরে তিনি জানতে পারেন তিনি কোভিড পজিটিভ। সেদিনই তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাঁকে হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায়ও ভুগছিলেন তিনি।
ফকির আলমগীরের রক্তে ও ফুসফুসে ইনফেকশনও পাওয়া যায়। রক্তচাপ নেমে যায়। রক্তে ইনফেকশনের জন্য প্রায় প্রতিদিনই সকালে জ্বর আসছে। শুক্রবার নতুন অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া শুরু হয়। রাতে আবারও অবস্থার অবনতি হয়। রাতের মধ্যপ্রহরে হার্ট অ্যাটাক করে তিনি চলেই গেলেন।
১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় দিনটিতে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ফকির আলমগীর। জগন্নাথ কলেজে স্নাতক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ষাটের দশক থেকে তিনি সঙ্গীতচর্চা করেন।
গণআন্দোলনের কর্মী থেকে তিনি গণসঙ্গীতের অগ্রপথিক হিসেবে তিনি মেহনতি মানুষকে উজ্জীবিত করেছেন আজীবন। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে তাঁর গণসঙ্গীত উদ্দীপনার তৈরি করে। এছাড়া একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে এবং নব্বই এর সামরিক শাসনবিরোধী গণআন্দোলনে তিনি গান দিয়ে সবাইকে উজ্জীবিত করেছেন।
বাংলা পপ গানের বিকাশেও তিনি ছিলেন অগ্রগামী। ‘ও সখিনা’ গানের জন্য ব্যপক জনপ্রিয় ছিলেন ফকির আলমগীর। সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা তিনি। সঙ্গীতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ তিনি রাষ্ট্রীয় ‘একুশে পদক’-এ ভূষিত হয়েছিলেন।