রোমান কবির :
রেহানা মরিয়ম নূর, একজন মধ্যবিত্ত হিজাবী ও নামাজী নারী। একটি মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক। পারিবারিক টানাপোড়েন আছে তার। কর্মক্ষেত্রেও পড়েন নানা অসুবিধায়। কিন্তু নিজের আত্মসম্মান নিয়ে লড়ে যান। পুরুষতন্ত্র আর পুঁজিতন্ত্রকে কুঠারাঘাত করেন। আধুনিকতার নামে উপনিবেশ মানষিক সিস্টেমকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেন।
রেহানার পারিবারিক ও কর্মস্থলের সংকটের একটি দিককে নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করেছেন আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ। প্রতিবাদী নারী রেহানার বৈশিষ্ট্য নারীবাদী। সিগনিফিকেন্ট হিসেবে নারীবাদকে যেভাবে রিপ্রেজেন্ট করা হয়, পুরুষতন্ত্রের চোখ দিয়ে নারীবাদকে রিপ্রেজেন্ট করা, উপনিবেশ মানুষিকতা দিয়ে নারীবাদ ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে ডিফাইন করাকে সজোরে চপেটাঘাত করেছে সাদ।
সিনেমায় হাসপাতালের এক প্রগতিশীল আধুনিক ধারণার স্বামী-স্ত্রীর কথোপকথন এরকম- স্বামী: আচ্ছা আমরা দু’জনই চাকরি করি, কিন্তু আমরা অফিস থেকে ফিরে আমি কখনও রান্না করেছি? তুমি-ই তো রান্না করেছো আর আমি শুধুই খেয়েছি। স্ত্রী: করনি কেন? স্বামী: তুমি কখনও বলো নি কেন? কারণ তুমি মেনে এসেছো, এটাই নিয়ম। তুমি তোমার মাকে দেখছো রান্না করতে। তাই কর্মজীবী নারী হয়েও তুমি-ই রান্না করেছো।
এই ছবিটি দেখিয়েছে মানুষকে মানুষ হিসেবে ডিফাইন করা সবার উপর জরুরী। এর মধ্যে আবহমানকাল ধরে চলে আসা পোশাকের রাজনীতি, ধর্মীয় উন্মাদনায়, অধর্মের জারিজুরিতে, উপনিবেশিক দাসত্বের রুপরেখায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে মানবিক মানুষের জীবন। হিজাবী রেহানা, এসব পোশাকের রাজনীতি, উপনিবেশিক প্রগতিশীলতাসহ নানা নেতিবাচকতাকে তুলে ধরে দর্শকের মননে সজোরে ধাক্কা দিয়ে যায়। ছবিটি সময়ের চেয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
সিনেমাটি মধ্যবিত্তের বেদনার ছবি। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পুঁজিবাদের যাতাকলে পিষ্ট মানুষদের সাহসী হওয়ার সিনেমা।
বেদনার রং নীল। আর ছবিটি তাই বেদনার্ত নীলাভ। মিড শট ও ক্লোজ শটের নীলাভ দৃশ্যায়ন ছবিটিকে আরও মূর্ত করে তুলেছে দর্শক হৃদয়ে। ছবিটি নির্মাতার সংবেদনশীলতাকে প্রকাশ করেছে। মিলিয়ে দিয়েছে দর্শক হৃদয়ের সংবেদনশীল আত্নাকে।
অন্য চলচ্চিত্রের রিভিউ
⇒ কোটার বাইরের সিনেমা ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’
⇒ হলে এসে পয়সা খরচ করে টেলিফিল্ম!
নীলাভ লাইটিং। মিড শটে লং টেকে গল্প বলা, কোনো রকম গ্রামার মেনে শট ডিভিশনে না গিয়ে লং টেকে মিজসিনে দৃশ্যায়ন, ছোট ছোট ইনসার্ট, বিমূর্ত শটের মন্তাজ মূর্ত করে তু্লেছে ছবিটির এগিয়ে চলাকে।
তুহিন তমিজুলের চিত্রগ্রহণে পরিচালকের নিজস্ব সম্পাদনা মুন্সিয়ানা, শৈব তালুকদারের আবহ সঙ্গীত পৌণে দুই ঘন্টার ছবিকে দর্শক হৃদয়ে আন্দোলিত করতে পেরেছে বলেই মনে হলো।
রেহানা মরিয়ম নূর চরিত্রের সাথে আজমেরী হক বাঁধন একেবারেই মিশে গেছে। মনে হয়েছে সে-ই রেহানা। সাবেরী আলমসহ অন্যান্যদের অভিনয়ও ছিলো বেশ।
একই লোকেশনে পুরো ছবিটির দৃশ্যায়নেও কোনো ধরণের বিরক্তি অনূভুত হয় নি। ছবিটি সাদের জন্য আরও ভালো কিছু করার অনুপ্রেরণা হিসেবেই থাকবে।
লেখক: সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা