কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হলো তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক মুকাভিনয় উৎসব। শুক্রবার ২১ অক্টোবর সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে এ উৎসবের উদ্বোধেন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এবারের উৎসবের স্লোগান ‘মুকাভিনয় আমাদের সর্বজনীন ভাষা’।
চতুর্থবারের মতো এ উৎসবের আয়োজন করেছে ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম একশন (ডুমা)। রবিবার ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে এ উৎসব। বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশের মুকাভিনয় দলের সদস্যরা এ উৎসবে অংশ নিয়েছে।
ডুমার সভাপতি শাহ পরান শুভ্রের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবু সাদাত মো. সায়েমের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা, সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক ড. অসীম সরকার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ইসরাফিল আহমেদ এবং বাংলাদেশ মাইম ফেডারেশনের সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদ রিপন। স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের মডারেটর ফাদার তপন ক্যামিলাস ডি রোজারিও।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, ‘মুকাভিনয় প্রাচীন একটি শিল্প। এটি ইতিহাসের আলোকে নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার মধ্য দিয়ে সমাজ পরিবর্তনে কাজ করে। এর বেশ কিছু উদাহরণ আমাদের সামনে আছে।’
তিনি বলেন, ‘অষ্টাদশ শতকে যখন ফরাসি বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে, তখন খুব কঠিনভাবে কতগুলো সেন্সরশিপ আরোপ করা হয়েছিল। যেমনি লেখনিতে, বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে। তখন প্যারিসের রাজপথে ও পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মুকাভিনয় ছিল প্রতিবাদের শক্তিশালী একটি মাধ্যম। যেটি সমাজে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়েছিল।
সে সময় মুকাভিনয় শিল্পীদের প্রদর্শনী ও তাদের অভিনয় একটি শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছিলো বলে মত দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
তিনি আরও বলেন, ‘সমাজকে পরিবর্তন করতে যুগে যুগে শিল্পের এই ঘরানাটি অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখেছে। মুকাভিনয় এমন একটি শক্তিশালী মাধ্যম যেখানে কোনো বিষয় যখন উপস্থাপন করা হয় তখন বইয়ের কথার চাইতে বেশি দাগ কাটে, মানুষ দীর্ঘদিন মনে রাখে। এভাবেই একটি সমাজে পরিবর্তন ঘটে।’
এদিকে উপস্থিত অতিথিরা এ উৎসবের নানাদিক নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেন। তারা বলেন, কৃষ্টি সংস্কৃতি গোটা বিশ্বে মানব সমাজকে চিরায়ত আনন্দ ও অভিব্যক্তির বন্ধনে একত্রিত করেছে। মুকাভিনয়ের ক্লাসিক্যাল এই মাধ্যমটি আজকে তরুণ প্রজন্মর হাত ধরে যেভাবে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তা সত্যই গর্বের।
তারা আরও বলেন, আমরা কোনো না কোনভাবে মুকাভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত। যেমন কাউকে কিছু করতে নিষেধ করতে আমরা হাতের ইশারা করি। এটিও মাইম। কথা না বলেও যে অনেক কথা বলা যায় সেটা মুকাভিনয়ের মাধ্যমে বোঝা যায়। শিল্প, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ মুকাভিনয়ের মাধ্যমে উঠে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বক্তারা।
উৎসবের উদ্বোধনী দিনে বন্য প্রাণী নিধন নিয়ে ‘সাইলেন্ট থিয়েটার’মঞ্চস্থ করে ‘প্রলয় নাচন’, ‘থিয়েটার সার্কেল মুন্সিগঞ্জ’ মঞ্চস্থ করে ‘দ্যা অনেস্ট’, ভারতীয় মাইম ‘লিটল ড্রামা’ মঞ্চস্থ করে ‘জুম চাষ’, ‘মাইম আর্ট’ চারটি নকশা মূকাভিনয় প্রদর্শন করে, ‘শ্রুতি’ মঞ্চস্থ করে ‘বৃক্ষ লিপি’ এবং ঢাকার ‘গোল্লাছুট নাট্যদল’ মঞ্চস্থ করে ‘থার্ড পারসন’ ও ‘কাতুকুতু’।
তুরস্ক, ইরান ও ভারতের শিল্পীরা ছাড়াও বাংলাদেশে মুকাভিনয় সংগঠন থিয়েটার ‘সার্কেল মুন্সিগঞ্জ’, ‘সাইলেন্ট থিয়েটার’, ‘শ্রুতি মাইম অ্যান্ড থিয়েটার’, ‘গোল্লাছুট নাট্যদল’, ‘মিরর মাইম থিয়েটার’, ‘ঢাকা মাইম থিয়েটার’, ‘মাইম ফেস’, ‘থিয়েটার মুভমেন্ট’ ও ‘নাট্যতরী’সহ বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা এ উৎসবে অংশ নেয়।
প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে চলছে উৎসবের মূল আয়োজন। এছাড়া শহীদ মিনার, কার্জন হল, কলাভবন, শাহবাগসহ পুরো ক্যাম্পাসজুড়েই থাকছে পথ শো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতেও হচ্ছে প্রদর্শনী।
আয়োজনে রয়েছে মুকাভিনয়বিষয়ক কর্মশালা, সেমিনার, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মূকাভিনয় প্রতিযোগিতা এবং পোস্টার প্রদর্শনী।
প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে টিএসসিতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন দলের মুকাভিনয় প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রদর্শনীর টিকেট মূল্য ৩০ ও ৫০ টাকা।
রবিবার রাত ১০টায় অংশগ্রহণকারী দল ও প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হবে। এর মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটবে আন্তর্জাতিক মুকাভিনয় উৎসব।
আরও পড়ুন: সাংস্কৃতিক গবেষণায় কারাবন্দীরা