কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক:
ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ার হয়েছে খন্দকার সুমন নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘সাঁতাও’। গণঅর্থায়নে নির্মিত তার প্রথম সিনেমার প্রিমিয়ার শো সত্যিকার অর্থেই ছিলো হাউসফুল। রাজধানীর জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে ছবিটির প্রদর্শনীতে ছবিটি দেখতে দর্শকের উপচেপড়া ভিড় ছিলো। মিলনায়তনে আসন না পেয়ে সিঁড়িতেও কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো দর্শক। অনেক দর্শক পেছনে দাঁড়িয়েও ছবিটি দেখেছেন। অনেক দর্শক কানায় কানায় পূর্ণ অডিটোরিয়ামে ঢুকতে না পেরে ফিরে গেছেন।
তবে প্রান্তিক কৃষকের জীবনধারার উপর নির্মিত ভিন্ন ধারার এই সিনেমাটি নির্মাণের জন্য অনেক কর্পোরেট স্পন্সর পাওয়া যায়নি। অনেক হল মালিকেরও এই ছবিটি নিতে অনীহা রয়েছে। আগামী ২৭ জানুয়ারি তবুও দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে ছবিটি মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন খন্দকার সুমন।
গণঅর্থায়নে সিনেমাটি নির্মাণের পেছনের গল্প বলতে গিয়ে এ সব কথা তুলে ধরেছেন নির্মাতা খন্দকার সুমন। সাঁতাও নির্মাণের অমানসিক পরিশ্রমের পেছনের গল্প বলতে গিয়ে সুমন অশ্রুসংবরণ করতে পারেনি। তিনি বলেন, সিনেমা হল থেকে শুধু নয় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের ছবিকে স্পন্সর করতে রাজি হয়নি। তাদের কাছে কৃষক হচ্ছে ব্র্যান্ডিংয়ের জায়গা থেকে সর্বনিম্ন জায়গা। কিন্ত এদেশে সবচেয়ে বড় ব্যান্ড হচ্ছে কৃষক।
সুমন এ সময় তুলে ধরেন আরেক স্ট্রাগলিং নির্মাতা রাসেল আহমেদের কথা। রাসেল আহমেদের কথা বলতে গিয়ে বলেন, রাসেল ‘নৃ’ নামের একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে গিয়ে স্পন্সরদের রোষানলে পড়েন। সিনেমার কিছু মুরব্বীদের তিরস্কারের মুখেও পড়েন রাসেল। আবেগাপ্লুত সুমন বলেন, ডাক্তার বলেছে রাসেল হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। আসলে আমরা তাকে মেরে ফেলেছি।
এ সময় সিনেমাটির নায়িকা আইনুন পুতুল আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমাদের ছবিটি গোয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছিলো। আমার মা অসুস্থ থাকায় আমি যেতে পারিনি। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে এটা গোয়া-অস্কারের চেয়ে কম কিছু না।’
এদিকে সাাঁতাও নির্মাণ দর্শকদের মধ্যে ভালোলাগার তৈরি করেছেন। সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। ছবিটি প্রান্তিক কৃষকদের জীবনধারা ও তাদের সংস্কৃতি, ধর্মীয় বিশ্বাস ও কৃষ্টিকে তুলে ধরেছে। প্রান্তিক কৃষকদের উপর নিপীড়ন আর গ্রামীণ রাজনীতি উঠে এসেছে ছবিটিতে। দেখানো হয়েছে কৃষকের বধূ পুতুলের ঘর বদলের গল্প, সন্তান হারানোর গল্প ও তার একমাত্র নি:সঙ্গতার সঙ্গী সন্তানসম লালু, যে তাদের গৃহপালিত গরু তার সঙ্গে পুতুলের সম্পর্কের গল্প। কৃষক ফজলুর কৃষকজীবনের সংগ্রামের গল্প, গ্রামের কৃষকজীবনের কষ্টি-কালচারের গল্প উঠে এসেছে।
ছবিটিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফজলুল হক ও আইনুন পুতুল। আরও অভিনয় করেছেন শ্রাবণী দাস, সাবেরা ইয়াসমিন,ফারুক শাহির চিনু, সাক্কু শহীদসহ অনেকে। শরীফুল আনোয়ারের প্রযোজনায় চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন খন্দকার সুমন। ছবিটি কয়েক বছর ধরে গণঅর্থায়নে নির্মিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে রোমান-জাহিদের সিনেমা মধুমতির তীরে