কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক:
চলচ্চিত্র অঙ্গনের সকলকে কাঁদিয়ে চিরপ্রস্থান করলেন চিত্রনায়ক, মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। ১৫ মে সোমবার সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে তিনি মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহ…)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭৪ বছর। ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
নায়ক ফারুকের পরিবারের সদস্যরা তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। মঙ্গলবার ১৬ মে তাঁর মরদেহ দেশে আনা হবে বলে জানা গেছে।
তিনি দীর্ঘদিন উচ্চ রক্তচাপ, মস্তিস্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন দীর্ঘদিন। তিনি ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মিয়াভাই’ নামে খ্যাত। তিনি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সফল রাজনীতিক। ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি।
এর আগে চিত্রনায়ক ও অভিনেতা ফারুক ২০২১ সালের ৪ মার্চ নিয়মিত চেকআপের জন্য সিঙ্গাপুরে যান। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। সে সময় তাঁকে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ফারুক চার মাস ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ভর্তি ছিলেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে তিনি কিছুটা সুস্থও হয়েছিলেন। তিনি মার্চে দেশে ফিরবেনে বলেও জানিয়েছিলেন তাঁর পরিবার।
নায়ক ফারুক ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম আকবর হোসেন পাঠান। ১৯৭১ সালে নির্মিত এইচ আকবর পরিচালিত সিনেমা ‘জলছবি’র মাধ্যমে ঢাকাই সিনেমায় তার অভিষেক। এরপর তিনি অসংখ্য ব্যবসাসফল সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
১৯৭৩ সালে আতাউর রহমান খান পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ‘আবার তোরা মানুষ হ’সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। এরপর ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতার আলোর মিছিল সিনেমায়ও তিনি অভিনয় করে খ্যাতি পেয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে নির্মিত ‘সুজন সখী’ ও ‘লাঠিয়াল’ সিনেমায় অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান তিনি। ছবি দুটি সে সময় ব্যপক ব্যবসা সফল হয়।
তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘সুজন সখী’‘লাঠিয়াল’ ‘সারেং বৌ’, ‘নয়নমনি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘আলোর মিছিল’‘মিয়া ভাই’সহ শতাধিক চলচ্চিত্র।
১৯৭৫ সালে ‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ফারুক শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিনি ২০১৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এছাড়া তিনি আরও অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
চিত্রনায়ক ফারুকের মৃত্যুতে শোকে ভাসছে পুরো চলচ্চিত্রাঙ্গন। তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে গুনী চলচ্চিত্র অভিনেতা মিশা সওদাগর তাঁর ফেসবুকে পেজে ফারুকের একটি ছবি দিয়ে লিখেছেন – “বিদায় মিয়াভাই’। আজ সকাল ৮:৩০ মিনিটে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মিয়াভাই’ খ্যাত নায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা ১৭ (গুলশান – বনানী) আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) ভাই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।”
চিত্রনায়ক ওমর সানী লিখেছেন-“আল্লাহ আমাদের লিজেন্ড ফারুক ভাইকে জান্নাত নসিব করুন। আমিন”।
চলচ্চিত্র পরিচালক জাকির হোসেন রাজু লিখেছেন, “বাংলা চলচ্চিত্রের মিয়াভাই খ্যাত, তুমুল জনপ্রিয় নায়ক ফারুক ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে স্তব্ধ হয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। মৃত্যু অনিবার্য, তবু মৃত্যু আমার ভালো লাগে না। এই সংবাদটি শুনলেই মন বিবশ হয়ে যায়। যে মানুষটি মৃত্যুবরণ করেন, হাজার চেষ্টা করলেও তার সাথে আর কোনদিন কথা বলা যাবে না, পৃথিবীর কোনো প্রযুক্তির মাধ্যমেও আর জানা যাবে না, মানুষটি কেমন আছেন! কী ভীষণ অসহায় আমরা মৃত্যুর কাছে।”
নিজের চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের একটি ছবিও পোস্ট করেছেন জাকির হোসেন রাজু। তিনি আরও লেখেন- ‘আমার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘জীবন সংসার’ দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘এ জীবন তোমার আমার’ এর নায়ক ফারুক ভাই। শত শত মধুর স্মৃতি তাঁর সাথে। যেসব স্মৃতি সিনেমার গল্পের চেয়েও মধুর। কোন একদিন সেই সব স্মৃতি নিয়ে বিষদভাবে লিখবো। আজ শুধু বলবো, পরপারে ভালো থাকবেন ফারুক ভাই। আল্লাহ যেন আপনার দোষত্রুটি ক্ষমা করে আপনাকে জান্নাতবাসী করেন। আপনার পরিবারের সবাইকে শোক সইবার শক্তি দেন। আমীন।’
চিত্রনায়ক জায়েদ খানও ফারুকের সঙ্গে নিজের একটি ছবি শেয়ার করেছেন। তিনি লেখেন, ‘এতক্ষণ কিছু লিখিনি, কারণ মনে হয়েছে আপনি বেঁচে আছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে চলে গেলেন। এটা তো কথা ছিল না। বলেছিলেন- জায়েদ আসতেছি, আড্ডা হবে। এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না আপনি নাই’।
এ সময়ে আলোচিত চিত্রনায়ক ও প্রযোজক অনন্ত জলিল তারে ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন, ‘প্রায় পাঁচ দশক ঢালিউডে অবদান রাখা ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি চিত্রনায়ক ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক (আমাদের ফারুক ভাই)। এই র্কীতিমান মহান মানুষটির প্রয়াণে গভীর শোক ও বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’
এদিকে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী লিখেছেন, “বিদায় নায়ক ফারুক। বিনম্র শ্রদ্ধা। আপনার আত্মার শান্তি হোক। অভিত্রেী শাহনাজ খুশি লিখেছেন, “শোক এবং শ্রদ্ধা। না ফেরার দেশে, সবার নায়ক ফারুক।”
এদিকে নায়ক ফারুকের মৃত্যুতে শোকাহত স্ট্যটাস দিয়েছেন অভিনেত্রী তারিন জাহান, বিজরী বরকতুল্লাহ, সংগীতশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী, চিত্রনায়িকা জাহারা মিতু, তরুণ চলচ্চিত্র পরিচালক ঝুমুর আসমা জুঁইসহ চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষেরা।
আরও পড়ুন: চিত্রনায়ক ফারুকের শারীরিক অবস্থার উন্নতি