কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক:
‘হোক কলরব’, ‘নাম ছিল না‘, ‘ধূসর মেঘ’-গদানগুলোর গীতিকার রাজীব আশরাফ সবাইকে কাঁদিয়ে জীবন সংসার ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন অচেনা জগতে। তিনি ছিলেন একাধারে কবি ও নির্মাতা। শুক্রবার ১ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে সংস্কৃতির অঙ্গনে শোকের ছায়া। দেশের নামকরা নির্মাতা, শিল্পী ও সংস্কৃতিজেনরা তাঁর স্মৃতি ভুলতে পারছেন না। শোকস্মৃতিতে সামাজিক মাধ্যম থেকে গণমাধ্যমে বিরাজমান।
দীর্ঘদিন নিউমোথোরাক্স (ফুসফুসের রোগ) এর মতো জটিল রোগে ভুগছিলেন রাজীব আশরাফ। তিনি ২০২১ সালে দীর্ঘমেয়াদে চিকিৎসা নেয়ার পর কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে আচমকা শরীর খারাপ হলে তাঁকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেলে।
ঢাকা মেডিকেল থেকে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মিরপুরের বাসায়। আসর নামাজের পরে জানাজা শেষে মিরপুর-১১ নম্বর জান্নাতুল মাওয়া কবরস্থানে তাঁকে করা হয় দাফন।
অর্ণবের গাওয়া বেশকিছু গান লিখেছিলেন রাজীব হায়দার। এর মধ্যে জনপ্রিয় গান হোক কলরব গানটি লিখেছিলেন তিনি। এছাড়া তিনি লিখেছিলেন প্রকৃত জল, ধূসর মেঘ, নাম ছিল না, রোদ বলেছে হবেসহ অসংখ্য গান। ২০২০ সালে প্রকাশিত হয়েছিলো তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ধরেছি রহস্যাবৃত মহাকাল’।
তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লিখেছেন, আমি দূর্বল মানুষ! দুঃসংবাদ নেওয়ার মতো চওড়া বুক আমার নাই। তোর জন্য এলিজি লেখার ক্ষমতা আমার নাই। আমি জানি না এই সময় কি বলা যায়, কেমনে বলা যায়। তোর জন্য শোক আমি না হয় গোপনেই করবো। তবে প্রকাশ্যে এটা বলা দরকার, তুই ছিলি সময়ের গোপন কিন্তু উজ্জ্বল তারাটা! এখন গুছাইয়া লিখতেও পারতেছি না।
তিনি লিখেন, তুই কি মনে কইরা আমারে দিয়া তোর বইয়ের ভূমিকা লেখাইছিলি তাও জানি না। একটা কারণ তুই অবশ্য বলছিলি। “এই শহরে বইসা ছিলাম বহুদিন আপনার সাথে কাজ করবো বইলা, ভাই-বেরাদার হমু বইলা। নিজের স্বভাবসুলভ মুখচোরা ভাবের জন্য সেটা তো হইলো না। এখন আমার বইয়ের ভূমিকা লেখেন, বড় ভাই!”
ফারুকী লিখেন, আমি পরম আনন্দ নিয়া লেখছিলাম। কি জানি তোর মধ্যে আমার কোন খন্ডাংশ কি খুঁইজা পাইছিলাম? নাকি আমরা সবাই সবার মধ্যে লুকাইয়া থাকি একটু আধটু? শুধু ডুব দিলেই মিলে?
জীবন পার হইয়া এখন ঐখানে কিরকম হবে তোর দিনকাল অথবা রাতকাল কে জানে! তবুও দুনিয়ার নিয়মে বলি, ভালো থাকিস, রাজীব আশরাফ।
সঙ্গীতশিল্পী রাহুল আনন্দ তার ফেসবুকে লিখেছেন, “হোক কলরব,ফুলগুলো সব – লাল না হয়ে নীল হলো কেনো?” রাজীব Rajib Ashraf , তোর লেখা এ গান এখন সময়ের প্রতিবাদ। তবে কেনো তুই নিজে নীল হয়ে গেলি!!!
এতো কিসের তাড়া ছিলো তোর? আমাদের না কতো গান আর কতো শত অধরা স্বপ্ন! আমি আর তোর পাগলপারা মুখটায় “দাদা” ডাকটা শুনতে পাবো না? ঝাঁপিয়ে পড়বি না এ বুকে? খালি করে দিয়ে গেলি তো বোকা… শুধু আমি নই – এই পুরো শহর আজ তোর জন্যে কাঁদছে… সবাই ভাবছে বৃষ্টি পরছে… টুপটাপ টুপটাপ…আমি স্মৃতি হাতড়াই ছবিতে… কবিতায়… ইনবক্সে!!!!
অন্যলোকে ভালো থাকিস… আসছি আমরাও একে একে… তোর জন্যে এই পাগলের ভালোবাসা আর প্রার্থনা।
নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী লিখেছেন, রাজীব তোর কথা মনে পড়ে।
এছাড়া সঙ্গীতশিল্পী অর্ণব তাঁর একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, রাজীবটা চলে গেলো!
মেঘদলের শিল্পী শিবু কুমার শীল ফেসবুকে লিখেছেন, এইমাত্রই জানলাম রাজিব মারা গেছে। এই মুহুর্তে এই শোক সংবাদটি আমাদের বহন করা ছাড়া আর কিবা করার আছে। আমাদের সময়ের কবি গীতিকার রাজিব তার কাজে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছিল তা আজ স্বীকৃত। তার গানের কথা রাজপথের শ্লোগান হয়েছিল। এই ভাগ্য কজনের হয়। আমাকে ভীষণ পছন্দ করত রাজিব আমি ওর বানানো বিজ্ঞাপনে ভয়েজ দিয়েছিলাম একবার। সেদিন অনেক আলাপ হয়েছিল আমাদের। রাজিবের সাথে আমার শেষ দেখা একদিন আমি নিকেতনের গেটে দাঁড়িয়ে।একটা মটরসাইকেলের পেছনে চড়ে কোথাও যাচ্ছিল রাজিব। আমাকে দেখে সে মোটরসাইকেল থেকে নেমে ছুটে এলো কাছে এসে বলল এ হাওয়ায় সে মুগ্ধ! আরো চাই আরও হোক। কোনো রকমে করমর্দন করে সে আবার ছুটল। কোথায় ছুটে গেলো সে। আহা রাজিব আবার কি এ হাওয়ায় এই পৃথিবীর মাটি জলে আমাদের দেখা হতে পারতো প্রিয় ভাই! ভালোবাসা। অনন্ত এ যাত্রা লিরিকাল হোক প্রিয় কবি!
শোক জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন চিত্রগ্রাহক রাশেদ জামান, নির্মাতা খিজির হায়াত খান, রেদোয়ান রনি, আশশফাক নিপুন ও চয়নিকা চৌধুরীদের মতো নির্মাতারা। শিল্পীদের আজ কারও মন ভালো নেই। তাদের সবারই চোখে অশ্রু, মুখে বেদনার আর্তি গীতিকার রাজীব আশরাফের জন্য।