কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক:
উপমহাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিত রায়ের অমর সৃষ্টি ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘দেখো রে নয়ন মেলে’, ‘ভূতের রাজা দিল বর’, ‘হীরক রাজার দেশে’ সিনেমার ‘মোরা দুজনায় রাজার জামাই’, ‘আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে’ গানগুলো অনুপ ঘোষালের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়ে কালজয়ী হয়ে আছে। দীর্ঘ জীবনের ইতি ঘটিয়ে সঙ্গীতশিল্পী অনুপ ঘোষাল ৭৮ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন ১৬ ডিসেম্বর।
এদিন দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে তিনি মারা গেছেন। তাঁর প্রয়াণের খবরে কলকাতার মূখ্যমন্ত্রী মমতা থেকে শুরু করে বিধায়ক, মন্ত্রী, তারকা-শিল্পীরাও শোক জানিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে শোক ছড়িয়েছে কলকাতা থেকে বাংলাদেশেও। শোকাহত উপমহাদেশের চলচ্চিত্র ও সঙ্গীতাঙ্গন। প্রয়াত শিল্পী অনুপ ঘোষালের সৃষ্টিকর্মের প্রতি স্মরণ করে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় শিক্ত হচ্ছে কালচারাল ইয়ার্ড এর লেখক ও পাঠকমহল।
অনুপ ঘোষালের জীবন-যৌবন ও সঙ্গীত সাধনা:
অনুপ ঘোষালের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সঙ্গীত পরিবারেই। তার বাবার নাম অমূল্যচন্দ্র ঘোষাল, মায়ের নাম লাবণ্য ঘোষাল। মা গান গাইতেন। মায়ের অনুপ্রেরণায় গান শিখেছেন অনুপ। তিনি আশুতোষ কলেজ থেকে মানবিকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। এরপর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুলগীতির রূপ ও রসানুভূতি নিয়ে গবেষণা করেন তিনি। ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকে ভারতীয় ডিগ্রি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন তিনি।
তিনি বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রের বহু জনপ্রিয় গান গেয়েছেন। মাত্র ১৯ বছর বয়সে সত্যজিৎ রায়ের ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ সিনেমায় ‘দেখো রে নয়ন মেলে’ ও ‘ভূতের রাজা দিল বর’সহ মন্ত্রী মশাই’ এর মতো কালজয়ী গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। এরপর তিনি ১৯৮০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘হীরক রাজার দেশে’ সিনেমার ‘মোরা দুজনায় রাজার জামাই’, ‘আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে’, ‘এসে হীরক দেশে’র মতো গানও গেয়েছেন। তিনি চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়ে পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কারও।
এছাড়া গেয়েছেন তপন সিনহা পরিচালিত হিন্দি ‘সাগিনা মাহাতো’ সিনেমার গান। বিখ্যত হিন্দি সিনেমা ‘মাসুম’ এর ‘তুঝসে নারাজ নেহি জিন্দেগি’ গেয়ে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি।
অনুপ ঘোষাল গেয়েছেন একাধারে ঠুমরি, খেয়াল, ভজন, রাগপ্রধান, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি। গেয়েছেন দ্বিজেন্দ্রগীতি, রজনীকান্তর গানসহ আধুনিক বাংলা গান ও লোকগানও। নজরুলগীতিতে তিনি ছিলেন প্রসিদ্ধ।
জীবনের শেষ দিকে তিনি রাজনীতিতেও সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০১১ সালে হুগলির উত্তরপাড়া আসন থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জয়লাভও করেছিলেন।