রোমান কবির:
যে ছিলো দৃষ্টির সীমানায়, যে ছিল হৃদয়ের আঙিনায়, সে হারালো কোথায় কোন দূর অজানায়….. সেই চেনা মুখ কতোদিন দেখিনি….। সত্যিই এই গান যার হৃদয় থেকে কম্পিত হয়ে কণ্ঠে ধ্বনিত হতো তিনি শাহনাজ রহমতুল্লাহ। দেশপ্রেমের গান যেনো তার কণ্ঠেই শোভা পেতো। তিনি শুধু গান কণ্ঠস্থ-ই করতেন না। তাঁর হৃদয়ে কম্পিত অনুরননে যেনো বাজতো গান। হৃদয় থেকে উৎসারিত গান তার চোখে, তার মুখে ফুটে উঠতো। ছলছল চোখ বলে দিতো দেশপ্রেম, মানবপ্রেম তাকে কতটুকু আলোড়িত করছে। তাঁর একনিষ্ট শ্রোতাদের চোখে-মুখে-মননেও ধরা দিতো সেই আবেগমথিত প্রেম। সেই প্রেমবিলানো মানুষটি সত্যিই দৃষ্টির সীমানায় নেই, হারিয়ে গেছে দুর অজানায়।
‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’-গানটির মধ্যে যার এতো আকুতি ফুটে উঠতো, সে আর কখনও বায়না ধরবেনা সেই ছোট্ট সোনার গাঁয় যাবার। ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে, এবার বল’বললেও যার একতারা আর কথা বলছেনা। আকুতি জানাচ্ছে না গাইবার জন্য।
কিংবদন্তি দেশাত্ববোধক শিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ আজ থেকে অর্ধযুগ আগে পাড়ি জমিয়েছেন অজানায়। কিন্তু তাঁর আকৃতিমাখা কণ্ঠ রেখে গেছেন সঙ্গীতপ্রেমী দেশপ্রেমী শ্রোতাদের জন্য।
১৯৫২ সালের ২ জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ। তাঁর বড়ভাই আনোয়ার পারভেজ দেশবরেণ্য সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন। তাঁর ছোট ভাই জাফর ইকবাল ছিলেন প্রখ্যাত অভিনেতা ও গায়ক। ষাটের দশকে শৈশবেই তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন সিনেমার গানে। মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি প্লেব্যাক করেছেন নতুন সুর চলচ্চিত্রে। বিশিষ্ট গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আলাউদ্দিন আলী, খান আতার মতো কীর্তিমানদের লেখা গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ।
বিটিভিতে নিয়মিত গাইতেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ। দেশের গান গেয়ে তার পরিচিত। দেশের গানগুলো দরদমাখা কণ্ঠে গাইতেন তিনি। গাইতেন চলচ্চিত্র, প্রেম ও বিরহের গান।
তাঁর প্রতিটি গানই হয়ে আছে কালজয়ী। একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়, প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ, এক নদী রক্ত পেরিয়ে , একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল কে যেন সোনার কাঠি , মানিক সে তো মানিক নয় , যদি চোখের দৃষ্টি , সাগরের তীর থেকে , খোলা জানালাসহ বহু কালজয়ী গান তার কণ্ঠে ধ্বনিত হয়ে অনুরণন ঘটিয়েছে শ্রোতাদের বুকে।
বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় শাহনাজ রহমতুল্লাহ’র চারটি গান স্থান পেয়েছে।
১৯৯২ সালে শাহনাজ রহমতুল্লাহ ভূষিত হয়েছিলেন একুশে পদকে। এর আগে পেয়েছেন ছুটির ফাঁদে চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এছাড়া দেশে বিদেশে বহু পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।
শাহনাজ রহমতুল্লাহকে কালচারাল ইয়ার্ড পরিবারের শ্রদ্ধা।