কালচারাল ইয়ার্ড ডেস্ক:
মঞ্চ থেকে শুরু করে বেতার, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র, সকল অঙ্গনের দারুন প্রতিভাধর অভিনেতা ছিলেন সকলের প্রিয় ‘সিরাজ ভাই’। দীর্ঘ জীবন পেয়ে সিংহভাগ সময়-ই কাটিয়েছেন অভিনয়ের জগতে। ষাটের দশকে শুরু চলচ্চিত্রে অভিনয়। দাপিয়ে বেড়িয়েছেন শুন্য দশক পর্যন্ত। শুধু কি অভিনয়, ছিলেন আবৃত্তি শিল্পী। লিখেছেন বই, বানিয়েছেন চলচ্চিত্র। কিন্তু সব ছাপিয়ে অভিনয়ে পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। চলচ্চিত্রের পরিচিত এই মুখ গত হয়েছেন আজ ৯ বছর। কিন্তু পরিচয়ের গন্ডি ছাড়িয়ে তিনি এখন অনেকটাই অপরিচিত। কারও স্মৃতিতে বা মনে আজ তিনি নেই। নিভৃতে নীরবেই চলে যায় তার মৃত্যুবার্ষিকী। কারও লেখা বা কথায়ই তিনি থাকেন না।
চার দশক যাদের সঙ্গে যিনি অভিনয় করেছেন, যাদের তিনি প্রিয় সিরাজ ভাই ছিলেন তাদের আলোচনায় শোনা যায় না তার কথা। এর আগে ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ ৭৮ বছর বয়সে তিনি অনেকটাই নীরবেই পরপারে পাড়ি জমিয়েছিলেন। কালচারাল ইয়ার্ড এই প্রবীন প্রতিভাধর শিল্পীর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।
১৯৩৭ সালের ১০ অক্টোবর ভারতের হুগলিতে জন্মগ্রহণ করেছেন সিরাজুল ইসলাম। তার বাবার নাম আবদুল হক ও মায়ের নাম ছিলো আরিফান্নেসা। বাবা সরকারি চাকরিজীবী ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকার বাংলাবাজারে থাকতেন পরিবার নিয়ে। তখন সিরাজুল ইসলাম নবম শ্রেণির ছাত্র। সিরাজুল ইসলাম পড়াশুনা করেছেন পুরান ঢাকার কিশোরী লাল জুবিলী স্কুলে, এরপর কায়দে আজম কলেজে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী কলেজ)। এরপর করেছেন সরকারি চাকরি। চালাতেন নাটকের দল। ফাঁকে করেছিলেন সাংবাদিকতাও।
১৯৬০ সালে ‘রাজা এল শহরে’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্র অভিনয়ে অভিষেক। অভিনয় করেছেন ষাটের দশকের ছবি ‘নাচঘর’, ‘দুই দিগন্ত’, ‘শীত বিকেল’, ‘অনেক দিনের চেনা’, ‘বন্ধন’, ‘ভাইয়া’, ‘রূপবান’, ‘উজালা’ছবিগুলোতে। এরপর নব্বই দশক পযন্ত বহু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। যার সংখ্যা প্রায় তিন শতাধিক।
তাঁর উল্লেখযোগ্য বহু ছবির মধ্যে আছে- চাওয়া পাওয়া, আলীবাবা, গাজীকালু চম্পাবতী, , ভাগ্যচক্র, সপ্তডিংগা, জাহা বাজে শাহ নাই, মোমের আলো, ময়নামতি, অবাঞ্চিত, হীরামন, নয়নতারা, অপরাজেয়, আলোর পিপাসা, আলোমতি, মায়ার সংসার, ভানুমতী, তিতাস একটি নদীর নাম, সূর্যকন্যা, ডুমুরের ফুল, চন্দ্রনাথ, রাজামিস্ত্রী, লাল বেনারশী, রাঙা ভাবী, আনন্দ অশ্রু সহ অসংখ্য চলচ্চিত্র।
১৯৮৪ সালে চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত চন্দ্রনাথ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন পার্শ্ব চরিত্রের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার।
এরমধ্যে তিনি বেশকিছু কাহিনীচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মান করেছেন। ‘জননী’ ও ‘সোনার হরিণ’তার নির্মিত দুটি কাহিনী চলচ্চিত্র।
কিশোর বয়স থেকে অভিনয় শুরু করে প্রবীণতর বয়সে এসেও অভিনয় করে গেছেন সিরাজুল ইসলাম। শেষ বয়সে অনেক মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছিলেন। তিনি ছিলেন টিভি পর্দার পরিচিত মুখ। প্রবীণতর এই শিল্পী প্রয়াণের আগ মুহুর্ত অভিনয় নিয়ে থেকেছেন।